বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ৩

 #বেপরোয়া_প্রেমঘোর

লেখকঃ গল্প ভান্ডার

পর্ব ৩


আদিবা বের হয়ে দেখলো আদি বিছানায় বসে আছে। সে বের হওয়ার পর থেকে তার দিকেই নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। একটু আগে যেই চোখে রাগ আর হিং'স্র'তা দেখেছিলো এখন সেই একই চোখে স্নিগ্ধতা ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।আদিবার কপাল থেকে র'ক্ত বের হওয়া বন্ধ হলেও জায়গাটা ফুলে নীল হয়ে আছে। আদির চোখ পড়লো সেখানে। মুহূর্তেই তার মাথা নত হয়ে গেলো লজ্জায়। সে কি করে এমন একটা কাজ করতে পারলো!নিজের হাতটাই এখন কে'টে ফেলতে ইচ্ছে করছে আদির। আদি বিছানা থেকে উঠে ধীর পায়ে আদিবার দিকে এগিয়ে গেলো।আদিবা কিছু না বলে এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে আদির কার্যকলাপ লক্ষ করছে।আদি আদিবার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো,

—'স্যরি রে!আমার মাথায় তখন খুব রাগ উঠেছিলো।তুই তো জানিসই রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।হঠাৎ বিছানায় তোর বসার জায়গায় র'ক্তের দাগ দেখে আমি ভেবেছিলাম তোর হয়তো অন্য কোথাও সম্পর্ক ছিলো আর এই বিয়েতে সম্মতি ছিলো না। তাই হয়তো তুই সেই কষ্ট থেকে হাত কে'টেছিস। আমার মাথায় একবারও ওই বিষয়টা আসেনি। ক্ষমা করে দে প্লিজ!আর এমন হবে না।তোকে আর কোনোদিন কষ্ট দেবো না আমি।'


কথাগুলো বলার সময় আদির কণ্ঠ যে কেঁপে কেঁপে উঠছিলো তা আদিবা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে।আদিবা আদিকে ততটা ভালোবাসে না ঠিকই কিন্তু এখন তো সে তার স্বামী।তাই স্বামীর এমন মিনতি তার বুকে বিঁধল। আদিবা আদির হাত ধরে বললো,

—'আমি কিছু মনে করিনি ভাইয়া। আমি বুঝতে পারছি আপনার পরিস্থিতিটা।আপনার জায়গায় যে কেও থাকলেই হয়তো এমনই করতো। আপনি প্লিজ এভাবে ক্ষমা চাইবেন না।আমি সব ভুলে যাবো। '

—'তুই সত্যি আমায় ক্ষমা করেছিস?ঠিক আছে।এদিকে আয়।'

( বাড়তিঃ গল্পটির সম্পূর্ণ প্রকাশ করছেন " গল্প ভান্ডার - পাঠক মহল। ) 

আদি আদিবাকে ধরে বিছানায় নিয়ে এসে বসালো।তারপর ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে নিয়ে এসে আদিবার সামনে টুল টেনে বসলো।তারপর পরম যত্নে তুলায় জীবাণুনাশক লাগিয়ে তা দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করতে লাগলো।আদিবার হাতে আর কপালে দুই জায়গায়ই ছোটোখাটো দুটো ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলো আদি।আর আদিবা তো এতক্ষণ শুধু মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো আদিকে।ব্যান্ডেজের কাজ শেষ হতেই আদিবার মাথার টাওয়েল খুলে সুন্দর ভাবে মাথা মুছে দিলো আদি।তারপর ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি এনে চুলগুলো ধীরেসুস্থে ব্রাশ করে দিলো। কাজ শেষ হতেই আদি আদিবাকে বললো, 


আদিঃ জয়েন হন অন্যতম সেরা গ্রুপে। যেখানে গল্প বিষয়ক সকল আলোচনা করতে পারবেন। ( 👇) 

https://facebook.com/groups/283506580418555/ 

—'অনেক রাত হয়েছে। তুই শুয়ে পড়।সারাদিন কম ধকল তো যায়নি!তার ওপর আমি আবার মূর্খের মতো একটা কাজ করলাম।তুই শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা কর।আমি একটু বাইরে যাবো।'

—'বাইরে যাবেন মানে?এখন কটা বাজে দেখেছেন আপনি ভাইয়া?১ঃ৩৫ বাজে এখন।এত রাতে আপনি কোথায় যাবেন।আপনিও শুয়ে পড়ুন ভাইয়া। না ঘুমালে শরীর খারাপ হবে।'

—'তোকে এত ভাবতে কে বলেছে?আর তুই আমাকে ভাইয়া বলছিস কেন?গাধী কোথাকার!নিজের স্বামীকে কেউ ভাইয়া বলে?মানুষের সামনে আমাকে ভাইয়া ডেকে তুই তো দেখছি আমার মান-সম্মান সব খেয়ে দিবি।'

—'আশ্চর্য!আমি তবে আপনাকে কি ডাকবো?আর আপনি আমাকে তুই তুই করে বলছেন কেন?নিজের বউকে কেউ তুই তুই করে বলে?'

—'হ্যাঁ বলে।আমি বলবো।আমি তোকে আমার যা ইচ্ছে তাই বলবো । তুইও আমায় বলতে পারিস কিন্তু শুধু ভাইয়া বাদে।অন্য মেয়েরা তাদের স্বামীকে কত সুন্দর সুন্দর নামে ডাকে!তুই আমার এমন একটা নাম দে।আর আমার মাকেও এখন থেকে মা বলে ডাকবি।আমি যাকে যা বলবো তুইও তাকে তাই বলবি।এখন বেশি কথা না বলে শুয়ে পড় তুই। আমি আসছি।'


আদিবাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদি বাইরে চলে গেলো।আদিবাও দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।শুয়ে শুয়ে সে ভাবতে লাগলো আদি আসলে খারাপ নয়। শুধু একটু বেশি রাগী। তাছাড়া বেশ ভালোই আছে।বিয়ের আগে তার আদির সাথে তেমন কথা হতো না।আদিবা তার বাবা-মার সাথে গ্রামের বাড়ি থাকতো।গ্রাম হলেও সেখানে এখন অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া। আর আদি থাকতো ঢাকায় তার মা আর প'ঙ্গু বাবার সাথে। আরো বছরখানেক আগেই আদির বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় হেঁটে চলার ক্ষমতা হারিয়েছেন। আদির বাবা ২ মাস আগে হার্ট অ্যাটাকে গত হয়েছেন।যেহেতু আদি আদিবাকে আগে থেকেই ভালোবাসতো, একদম আদিবার ছোট বেলা থেকে তাই সে ওমন অবস্থায় আদিবা আর ওর মাকে বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলে।আদির বাবা ওসমান সাহেবও বাঁধা দেন না আর রিয়া চৌধুরী তো এ কথা শুনেই খুশি। তিনি আদিবাকে খুব ভালোবাসেন।আদিবা ভাবলো আদিকে তবে কি নামে ডাকা যায়। আদি যেহেতু মাঝে মাঝে ভালো আর মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করে তবে একটা নাম তো দেওয়াই যায়।

—'আচ্ছা ওনি তো কখনো বদরাগী আবার কখনো কেয়ারিং হয়ে যায়। তবে ওনার নাম কি দিবো?...মিঃ মিষ্টি করলা দিলে কেমন হয়?হ্যাঁ এটা বলেই ডাকবো।একদম ওনার সাথে পারফেক্ট ম্যাচ নামটা।'


আরো হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আদিবা ঘুমিয়ে পড়লো।

সকালে রোদের মিষ্টি উত্তাপেই আদিবার ঘুম ভা'ঙলো।কিন্তু মুখের ওপর অন্য কাউকে ঝুঁকে থাকতে দেখে সে চিৎকার করে উঠতে গেলো।আর সাথে সাথেই আদির মাথার সাথে ধা'ক্কা খেলো। দুজনেই ব্যথায় অস্ফুট শব্দ করে উঠলো।আদিবা কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললো,

—'আরে কি আশ্চর্য! আপনি এভাবে আমার মাথার ওপর ঝুঁকে ছিলেন কেনো?এমনিতেই কাল কপালে ব্যথা পেয়েছি তার উপর এখন আবার আপনার লোহামার্কা মাথার সাথে ধা'ক্কা খেলাম।'


আদি ব্যস্ত হয়ে বললো,

—'স্যরি স্যরি।আমি তো তোকে ডাকতে এসেছিলাম।বেশি ব্যথা পেয়েছিস?আবার ব্লিডিং হচ্ছে নাকি!দেখি আমাকে দেখতে দে তো।'


বলেই আদি আদিবার কপাল চেক করতে লাগলো।আদিবা বললো,

—'আচ্ছা আপনি থামুন।আমার ওতটাও লাগেনি আর ব্লিডিং ও হচ্ছে না।আপনি এখন সরুন।আমাকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে হবে।আজ কত আত্মীয় স্বজনরা আসবে নতুন বউ দেখার জন্য। আর আমি কিনা এখনো বিছানায়!দেখেছেন ৯ টার বেশি বেজে গেছে। আপনি তো আমাকে আরেকটু আগে ডাক দিলেই পারতেন!দেখি সাইড দিন।'


কথাগুলো বলেই আদিবা আদিকে মৃদু ধা'ক্কা দিয়ে সরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চললো।আদি আদিবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।মূলত সে আদিবাকে ডাকতে আসেনি।নিচে গিয়ে আত্নীয় স্বজনকে ফোন করে খোঁজ খবর নেওয়ার পর শুধু আদিবা উঠেছে কিনা এটা দেখতে এসেছিলো।কিন্তু ঘরে এসেই সে তার ঘুমন্ত পরীর মুখপানে দৃষ্টি আটকে ফেলে!

—'তুই যে আমার ভোরের সদ্য ফোটা ঘুমন্ত পরী আদিবা!এই পরীটার থেকে এতদিন কি করে দূরে ছিলাম ভাবতেই অবাক লাগছে।এখন তোকে সবসময় আমার কাছে রাখবো। কোনো কষ্ট পেতে দেবো না আমার পরীটাকে!'

কিঞ্চিত প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো আদির মুখে......


চলবে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২