বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ৬

বেপরোয়া_প্রেমঘোর 

লেখিকা—প্রিয়া (ছদ্মনাম) Priya's Story


পর্ব ৬


খাবার টেবিলে বসে আছে আদি,ওসমান চৌধুরী, আফজাল হোসেন,মিনি হোসেন ও অভি।আফজাল হোসেনকে হুইল চেয়ারে করেই বসানো হয়েছে টেবিলের সামনে। সকালে আদি আদিবাকে অনেক্ষণ বুঝিয়েছে যে রাতের ঘটনাটা নেহাতই মনের ভুল ছিলো।আদিবা আবার হরর মুভি বলতে পা'গ'ল।আদি সেই জের ধরেই বুঝিয়েছে যে অতিরিক্ত হরর মুভি দেখার ফলে ওর হ্যালুসিনেশন হয়েছে।সবার সাথে সময় কাটালেই ঠিক হয়ে যাবে। আদিবাও ব্যাপারটা মেনে নিয়ে আদির বাবার ঘরে আজ অনেকবারই গিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই গিয়েছিলো তাকে সবার সাথে খাবার খাওয়ানোর জন্য নিচে নিয়ে আসতে।তিনি প্রথমে আসতে চাইছিলেন না।কিন্তু আদিবা প্রায় কান্না করে দিচ্ছিলো দেখে আর না এসে পারলেন না।কাল রাতে দেরিতে ঘুমানোর ফলে রিয়া চৌধুরী আজ সকালে উঠেন নি।আদিবা নিচে এসে রান্নাঘর ফাঁকাই পেয়েছে। তাই এ বাড়িতে আসার পর প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ সকালের নাস্তা সে নিজে করেছে সবার জন্য। 


সবাই খাওয়া শেষে যার যার ঘরে চলে গেছে। আদি একটু বাইরে গেছে। তার ম্যানেজারের সাথে অফিসের কাজ সংক্রান্ত কিছু বলার জন্য। আদিবাকে বলে গেছে মা বা মামির সাথে গিয়ে থাকতে যাতে সে ভয় না পায়। আদিবা নিচে টেবিলের সবকিছু গুছিয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিলো।এখনো শাওয়ার নেয়নি সে।আর রান্নাঘরে অনেক্ষণ থাকার ফলে বেশ অনেকটাই ঘেমে গেছে বেচারি।অস্থির হয়ে ঘরে চললো গোসল করতে।আদিবা তার রুমের সামনে গিয়ে দেখলো অভি আদিবার ঘর থেকে বের হচ্ছে। অভির সাথে আদিবার একবারও কথা হয়নি।অভি কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলে না।কিন্তু অভিকে নিজের ঘর থেকে বের হতে দেখে খানিকটা অবাক হয়েই আদিবা জিজ্ঞেস করলো,

—'ভাই আপনি এই সময় এখানে!কোনো দরকার? '

—'না আসলে আমি... হ্যাঁ আমি একটু আদিকে খুঁজছিলাম।আসলে ঘরে বসে বসে বোরিং লাগছিলো খুব।তাই ভাবলাম ওর সাথে একটু গল্প করে যাই।সমবয়সী হওয়ার কারণে ওর সাথে আমার ভাবটা একটু বেশিই বুঝলে।'

—'জি ভাইয়া বুঝতে পেরেছি। ওনি তো খেয়েই বাইরে চলে গেছেন।অফিসের কি কাজ নিয়ে কার সাথে যেন দেখা করবেন।'

—'ওহ আচ্ছা। আমি তো জানতাম না।আমি ওকে ডাকতেই এসেছিলাম। ঠিক আছে আমি এখন যাই।'

—'ভাইয়া বসুন না ঘরে।আদির জন্য অপেক্ষা করুন এখানেই।ও এসে পড়বে তাড়াতাড়িই।'

—'না আর বসবো না এখন।ও আসলে দেখা করে নিবো।বাই দ্যা ওয়ে, তোমার সাথে তো আমার তেমন কোনো কথাই হয়নি।তা তুমি এখন কি করবে?পড়াশোনা চালিয়ে যাবে নাকি বাড়িতেই থাকবে?'

—'ভাইয়া এইচএসসিটা তো দেবোই।এখন তারপর কি করবো বলতে পারছি না।ওনার সাথে কথা বলে দেখবো।'

—' আচ্ছা ভেরি গুড।ভালো করে পড়াশোনা করো।সংসার নিয়ে ব্যস্ত থেকে পরীক্ষায় খারাপ করলে কিন্তু হবে না।মাঝে মাঝে বই নিয়েও বসো ঠিক আছে?ফাঁকিবাজি করো না পড়ায়।দুই দিন গেলে দেখবে আদি নিজেই তোমাকে টাইট দিচ্ছে পড়ার জন্য। '


অভি কিছুটা শব্দ করেই হেসে উঠলো এবার।আদিবাও মুচকি হেসে বললো,

—'ইনশাআল্লাহ ভাইয়া।ভালো করেই পড়বো।দোয়া করবেন।'

—'অবশ্যই দোয়া করবো! কিন্তু আদিবা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম যদি তুমি কিছু মনে না করো!'

—'না না ভাইয়া।এতো আমতা আমতা করার কি আছে।আপনারা যাই বলবেন আমার ভালোর জন্যই বলবেন আমি জানি।কি জিজ্ঞেস করতে চান নিঃসঙ্কোচে বলে ফেলুন ভাইয়া!'

—'আচ্ছা আদিবা আদি কিন্তু তোমায় খুব ভালোবাসে।আমি আসলে জানতে চাইছি যে তুমিও আদিকে ভালোবাসো তো?'

আদিবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো,

—'ভাইয়া এসব প্রেম ভালোবাসা ব্যাপারটা ছোট বেলা থেকেই আমাকে কম টানে।ভালোবাসা কি আমি বুঝি না।তবে এটা বলবো ওনার সাথে থাকলে,ওনার সাথে কথা বললে যে অনুভূতিটা হয় আমি সেটা এর আগে কখনো অনুভব করিনি।ওনার ছোট ছোট কথাগুলোর মাঝেও কেমন যেন যত্ন মেশানো থাকে।প্রতিটা কথায় আমার ভালো লাগার উপর ওনার কনসার্ন থাকে।আমার খুব ভালো লাগে ওনার আশেপাশে থাকতে।একদিন হয়তো ভালোবেসেও ফেলবো!স্বামী হিসেবে ওনাকে পেয়ে আমি খুব খুশি। '

আদিবার চোখেমুখে ধরা দিল একরাশ উৎফুল্লতা। কিন্তু অভি আর কিছু না বলেই হন্তদন্ত পায়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আদিবা বুঝলো না অভি এভাবে কেন চলে গেল কিছু না বলে!সে আর না ভেবে ঘরে ঢুকলো।ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ২৭ টা মিসড্ কল।সবগুলোই আদির নাম্বার থেকে।এতবার কল করার কারণ কি?আদিবা ভয় পেয়ে গেলো।আদির আবার কিছু হলো না তো?সে সাথে সাথেই কল ব্যাক করলো।২ বার রিং হতেই আদি রিসিভ করে বললো,

—'কোথায় থাকো তুমি হ্যাঁ?কতবার কল করেছি দেখেছো?একটাবার ফোনটা রিসিভ করা যায় না?ফোন চালাও কি করতে?'

—'আরে আপনি এত হাইপার হচ্ছেন কেন?আমাকে বলতে দিন।ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো আর আমি এতক্ষণ নিচে ছিলাম।টেবিল গুছিয়ে রেখে আসলাম।এজন্য ধরতে পারিনি।আপনি বলুন কেন কল করেছিলেন?'

—'আমার আসতে অনেক লেট হবে।সন্ধ্যা বা রাতও হতে পারে।কিছু ফাইলে সমস্যা হয়েছে। ম্যানেজার সেটা ঠিক করতে পারছেন না।আমারই অফিসে যেতে হবে। এটা জানাতেই কল করলাম।'

—'মানে টা কি?আপনি দুপুরে খাবেন না?না খেয়ে থাকবেন?

—'আরে না।আমি কিছু একটা আনিয়ে খেয়ে নিবো।তুই না খেয়ে থাকবি না প্লিজ।আমার আসতে দেরি হবে।সাবধানে থাকবি ততক্ষণ। মার ঘরে গিয়ে বসে থাক।নিজের খেয়াল রাখবি।আমি এখন রাখছি।মিটিং এটেন্ড করতে হবে। আল্লাহ হাফেজ। '

—'আচ্ছা ঠিক আছে।কিছু খেয়ে নিয়েন কিন্তু। রাখি।আল্লাহ হাফেজ।'


আদিবাই কলটা কেটে দিলো।তারপর আলমারি থেকে একটা পাতলা বেগুনি রঙের হাফ সিল্ক শাড়ি বের করলো সে গোসল করে পরার জন্য। ঘরের দরজা লক করে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ঘরের দরজা লক আছে ভেবে আর ওয়াশরুমের দরজা লাগালো না আদিবা।হালকা ভিরিয়ে দিলো শুধু। ঝর্ণা ছেড়ে সে মাথা নিচু করে মাথায় পানি দিতে লাগলো। গরমে থাকার কারণে মাথাও গরম হয়ে গেছে। চুলের খোপা ছেড়ে দিলো সে।কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি বাঁধলো কারেন্ট চলে যাওয়াতে।ঘরের ভেতরে হওয়ায় অন্ধকারে ছেয়ে গেলো ওয়াশরুম।আদিবা বিরক্ত বোধ করলো। এমনিতেই তার অন্ধকার ভালো লাগে না। তার উপর কাল ওমন ঘটনায় ভয় পেয়েছে বেশ।মাথার মধ্যে আজগুবি চিন্তা আসতে লাগলো।সে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইলো।কিন্তু দরজার হাতলে হাত দিতেই সেটা আদিবার হাত থেকে ছিটকে গিয়ে একাই লেগে গেলো!আদিবা ভয়ে কেঁপে উঠলো।এটা কি হচ্ছে তার সাথে?এরই মধ্যে ঝর্ণা থেকে পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেলে আদিবা ঝর্ণার দিকে তাকালো। সাথে সাথে পাশে থাকা বেসিনের ট্যাপ চালু হয়ে গেলো একাই।আদিবা রীতিমতো কাঁপা শুরু করলো ভয়ে। মনে মনে দোয়া দরূদ পড়তে লাগলো।এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সে জীবনে পড়েনি।এখনো কি তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? নাকি ব্যাপার অন্য কিছু!? আদিবা দোয়া পড়ে জোরে শ্বাস নিয়ে ভাবলো এসব মনের ভুল।কিচ্ছু হচ্ছে না এসব।সে সাহস করে চোখ খুললো আর দেখতে পেলো সত্যিই সবকিছু ঠিক আছে।কারেন্ট ও যায়নি আর ঝর্ণা থেকেও ঠিকঠাক পানি পড়ছে।দরজাটাও আদিবা যেভাবে ভিড়িয়ে রেখেছিলো ঠিক সেভাবেই আছে।আদিবা ভেবে পেলো তার সাথে আসলে হচ্ছে টা কি?কাল বাবার ঘরে আজ এখানে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা।এতবার কি করে এমন ভয়ংকর হ্যালুসিনেশন হতে পারে। আদিবা তড়িঘড়ি করে কোনোমতে শাওয়ার নিয়ে বের হলো।শাড়িটা চেঞ্জ করেই সে আদির মার রুমে চলে গেলো।একা এক রুমে এখন আর তার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।


_______________________


সময়টা তখন রাত ৭ টা।আদি এখনও বাড়ি ফেরেনি। কিন্তু ৩-৪ বার কল করেছিলো।আদিবা ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে কিছুই বলেনি।কি দরকার শুধু শুধু মানুষটাকে চিন্তায় ফেলার?এটা ভেবেই সে চুপ ছিলো।এতক্ষণ আদির মা আর মামির সাথে একসাথে বসে গল্প করছিলো আদিবা।রাত হওয়ায় আদির মা বলেছেন ফ্রিজ থেকে তরকারি বের করে রাতের খাবারের জন্য গরম করে নিতে।তিনি সামান্য অসুস্থ। তাই আদিবা নিচে এসেছে।সে ফ্রিজ থেকে তরকারি বের করে ওভেন অন করে বসিয়ে দিলো।তারপর ভাবলো আদির জন্য আলাদা করে একটু নুডলস্ রান্না করলে কেমন হয়?যেই ভাবা সেই কাজ।সে ওভেন থেকে তরকারি নামিয়ে ঝটপট নুডলস্ বানিয়ে ফেললো।নুডলস্ এর সাথে খাওয়ার জন্য একটা লেবু বের করলো ফ্রিজ থেকে।আদিবা রান্নাঘরে থাকা বেসিনের ট্যাপ ছাড়লো লেবুটা ধোয়ার জন্য। কিন্তু ট্যাপ ছাড়তেই তার হাত থেকে লেবু ছিটকে পড়ে গেলো।আদিবাও দু পা পিছিয়ে গেলো।কারণ ট্যাপ থেকে পানির বদলে বের হচ্ছে টকটকে লাল র'ক্ত।আদিবা ভয়ে চিৎকার দিতেও যেন ভুলে গেলো।ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো সে।আদিবা ভাবলো তার সাথে হয়তো আবার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। ট্যাপ বন্ধ করে আবার ছাড়লেই সব ঠিক হয়ে যাবে।আদিবা বুকে সাহস নিয়ে বেসিনের দিকে এগিয়ে গেলো।যেই মুহূর্তে ট্যাপের দিকে হাত বাড়াবে তখনই আবার লোডশেডিং হলো যা আদিবার ভয় আরো বাড়িয়ে দিলো।একটা হিমশীতল ঠাণ্ডা হাওয়া রান্নাঘরের জানালা দিয়ে প্রবেশ করলো।অন্ধকারে চোখ বন্ধ করেই আদিবা ট্যাপের দিকে হাত বাড়ালো।হাতড়ে হাতড়ে যেই না ট্যাপটা স্পর্শ করলো ওমনি বিদ্যুৎ গতিতে ছিটকে গিয়ে রান্নাঘরের বাইরে পড়লো আদিবা। এমন মনে হলো যেন কেউ বিশাল শক্তিতে তাকে ধা'ক্কা দিয়েছে।মেঝেতে পড়ে চোখ পিটপিট করতে করতে অজ্ঞান হওয়ার আগে শুধু আবছা একজন পুরুষের মুখ দৃশ্যমান হলো আদিবার সামনে।


(রিচেক করতে পারিনি। দুঃখিত!☹️)


চলবে...? 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২