আমার তোমার আমাদের গল্প পার্ট ১০

আমার_তোমার_আমাদের_গল্প

পর্ব-১০

আবির_মাহমুদ


 অক্টোবরের শেষের দিকে হালকা শীতের আবাশ শুরু হয়েছে। এই ঠান্ডার ভিতরে আজ হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই অসময়ে বৃষ্টি অনিমার বোধগম্য হচ্ছে না। অনিমা সে দুপুর থেকে গিয়ে ছাদে বসে রয়েছে। দুপুরে অনিমা শুভকে প্রশ্ন করাতে শুভ তা বরাবরের মতোই এড়িয়ে যায়।


আপনি বললেন না তো আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে না কি? আপনাকে সেই সকালে আমি প্রশ্নটা করেছিলাম কিন্তু এখনো উওর পাই নি আমার প্রশ্নের। 


শুভ কিছু বলছে না চুপচাপ খাচ্ছে। যেন সে কিছুই শুনতে পাই নি। তার সকল ধ্যান এখন খাওয়াতে।


আপনি এরকম কেন বলুন তো? আপনি আমার কথার কোন উত্তরই দিচ্ছেন না। আপনি নিজের বিজন্যাস কিভাবে সামলান বুঝি না। একটা গুমরা মুখো মানুষ আপনি। 


ততক্ষনে শুভের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। বুঝছো অনি বিজন্যাস সামলাতে হলে বুদ্ধি লাগে। আর ঘরের বউয়ের থেকে বিজন্যাস সামলানো আরো সহজ। তোমার মতো পিচ্চি সেটা বুঝবে না। তুমি তো পারবে শুধু প্রশ্ন করতে সারাজিবন। কই স্বামী খেতে বসেছে, তার পাশে দাঁড়িয়ে তার কি লাগবে তা দিবে। তা না করে প্রশ্ন করেই যাচ্ছো আচ্ছা তোমার বংশ কি প্রশ্নধার বংশ? যে ভাবে একটি নিরহ মানুষকে প্রশ্ন করা ধর তুমি। আমি নিশ্চিত তোমার বংশ প্রশ্নধার ছিল। না জানি এরকম প্রশ্ন করে কতজন কে মেরেছ। কোনদিন যেন এরকম প্রশ্ন করতে করতে আমাকে ও উপরে পাঠিয়ে দাও।


দেখুন আমার বংশ নিয়ে কথা বলবেন না। আমাদের বংশের অনেক নাম আছে এলাকাতে। আমি আপনার স্ত্রী। স্ত্রী হিসেবে যথেষ্ট অধিকার আমার আছে আপনাকে প্রশ্ন করার।


হুম তুমি ঠিকই বলেছ, স্ত্রী হিসেবে একটা না হাজারটা প্রশ্ন করার অধিকার তোমার আছে। কিন্তু তুমি ভুলে যেও না আমি তোমাকে সেই অধিকার কখনোই দেই নি।


শুভ আর কিছু বলে না চলে যায় নিজের রুমে। অনিমা ও দ্বিতীয় বার কোন কথা বলে নি। উনি তো ঠিকই বলেছে আমি তাকে কিভাবে প্রশ্ন করি? যে মানুষটার কাছে আমি এখনো যোগ্য স্ত্রী হয়ে উঠতে পারি নি। তার উপর কি আসলে ও কোন অধিকার খাঁটানো যায় স্ত্রী হিসেবে? আমি তার মনে নিজের জন্য একটু জায়গা করে নিতে পারব না? পারব না তার সাথে আমার সাজানো সেই ছোট্ট সংসারটা করতে? নাকি হারিয়ে ফেলব? নিজের মনের ভিতর কেন এক অজানা ভয় কাজ করে? এই ভয়টা কিসের? তাকে হারানোর? 


এসব ভাবতেই কখন যে অনিমা কেঁদে দেয়। তার শ্যাম-সুন্দর গাল বেয়ে দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। অনিমার ধ্যান ভাঙ্গে তার মোবাইলের সাউন্ডে। সেই নাম্বার আবার ও কল এসেছে। কিন্তু কেন? অনিমা চোখের পানি মুছে কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করে।


ইউ অনিমা রাইট?


হুম। আমি অনিমা। কিন্তু আপনি কে বলুন তো? গতকাল রাতে কল দিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনালেন। আপনি আমার নাম্বার পেলেন কিভাবে। আপনার আর শুভর মধ্যে কি সম্পর্ক?


ওয়েট সবই জানতে পারবে। এখন শুধু এতটুকু জেনে রাখো যে আমি শুভর খুবই কাছের একজন। যতটা কাছে গেলে আমি তাকে নিজের করে পাব। 


প্লিজ বলুন আপনি কে? কি চান আপনি আমার কাছে? আমার শুভর কিছু করবেন না প্লিজ। 


শুভ তোমার!? হাসালে, শুভ শুধু আমার। যে কোন মূল্যে আমি তাকে হাসিল করে নিব। আর সে যদি আমার না হয়, তাহলে কারো হতে দিব না। তোমার ও না, শেষ করে দিব তাকে। ছোট বেলা থেকে যেটা চেয়েছি সেটা পেয়েছি। আর যেটা পাই নি সেটা শেষ করে দিয়েছি। সো শুভ আমার, সুতরাং তুমি শুভর জীবন থেকে সরে যাও। এতে তোমার ও ভালো হবে শুভর ও ভালো হবে। আর হা খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে নতুন এক শহরে নতুন এক আমিতে।


লাইনটা কেঁটে যায়। অনিমা হাতে থাকা মোবাইলের দিকে চেয়ে থাকে। অনিমার কেন যেন আজ ভীষন কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কেন? যে মানুষটা তাকে দেখতে পারে না তার জন্য? যে মানুষটা তাকে স্ত্রী হিসেবে অধিকার দেই নি তার জন্য? শুভ যখন আমাকে মেনে নিতে পারে নি তাহলে ওই মেয়েটাকে নিয়ে সুখে থাকুক না। আমার কাছে কি? আর তাতে আমার সমস্যাটা কোথায়? আমার তো কোন সমস্যা নেই কিন্তু বেহায়া মনটা যে মানতে চাচ্ছে না। কারনে অকারনে এ মন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাকে ছাড়া যে আমার চলবে না। আমার ছোট্ট এ জিবনে চলার জন্য তাকে চাই। রাত জোৎস্ন্যা বিলাস করার জন্য তাকে চাই। আমি না চাইতে ও যে সে আমার পুরোটা দখল করে নিয়েছে। তাকে আমি হারাতে পারব না।


হঠাৎ জোড় হাওয়া এবং বৃষ্টিতে তার ধ্যান ফিরে। অনেকক্ষণ হয়েছে সে ছাদে এসেছে। হঠাৎ বৃষ্টির জন্য সে নিচে চলে আসে। আজকের বৃষ্টিটা যেন তার কাছে বিরক্তিকর লাগছে। অসময়ে এ বৃষ্টি যা খুবই বিরক্তিকর। যদি সেটা হয় হালকা শীতের ভিতরে। অনিমা একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিচে চলে আসে। রুমের জানালা গুলো বন্ধ করতে গিয়ে তার চোখ যায় শুভর উপর। শুভ ঘুমিয়ে আছে, কতটা নিষ্পাপ লাগছে তাকে। এখন কেউ দেখলে বলবে না এই মানুষটা কতটা রাগি। কিন্তু তার এই নিষ্পাপ মুখের আড়ালে আছে ভিষন রাগ এবং ভয়ংকরতা। বাতাসে তার চুল উড়ছে। অনিমা গিয়ে কাঁথা টেনে দেয়। শুভ সেটাতে নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়। 


     আজ শুক্রবার। শীতের সকালের রোদটা মন্দ লাগছে না। পূর্ব আকাশ থেকে সূর্য মামা তার লাল রক্তিম আলো নিয়ে পৃথিবীর বুকে ফুটে উঠেছে। শুভ সেই ভোর বেলাই হাঁটতে বেরিয়ে গেছেন। আজ রহিমা খালাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। শুভ বের হবার আগে অনিমাকে বলে গেছে সবকিছু গুছিয়ে নিতে। অনিমা সব কাজ সেরে নাস্তা নিয়ে টেবিলে বসে আছে শুভর জন্য। কিছুক্ষনের মধ্যে সে চলে আসে, ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে যায়।


আমি না গেলে হয় না? আমার তো সামনে পরিক্ষা।


না হয় না। পরিক্ষা এখনো অনেক দিন বাকি আছে। তাছাড়া এত পড়ে লাভ নেই। সেই তো কয়েকদিন পরে বাচ্ছা সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে যাবে। এমনিতে রহিমা খালা আমাকে কড়া আদেশে বলে গেছে তোমাকে নিয়ে যেতে। রহিমা খালা আমার মায়ের মতো তাই তার কথা আমি ফেলতে পারব না। রহিমা খালার কোন ছেলে নেই। তাই মেয়ের বিয়ের সকল দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছে। বড় ভাই হিসেবে তার জন্য তো কিছু করতে হবে। এমনিতে আমি আমার দায়িত্বকে কখনো অবহেলা করি না। সেখানে তোমাকে নেওয়া ও আমার দায়িত্বের ভিতর পড়ে।


অন্যের দায়িত্ব ঠিকই পালন করতে পারে। কিন্তু ঘরের বউয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। হনুমান একটা।


কিছু বললে মনে হয় আমাকে।


না না কি বলব।


আমি তো শুনলাম তুমি আমাকে কিছু বলেছ।


শুনলেন যখন আবার জিঙ্গেস করছেন কেন? হনুমান কোথাকার।


কি! আমি হনুমান? তাহলে! তাহলে তুমি জলহস্তী।


কি! আমি জলহস্তী? তাহলে আপনি ক্যাঙ্গারু,বানর,বাদুড়,মশা,মাছি যা আছে সব কিছু আপনি।


দেখ আমি এখন তোমার সাথে ঝগড়া করার মুডে নাই।


আমি মনে হয় বসে আছি আপনার সাথে ঝগড়া করার জন্য। নিজেই তো প্রথমে শুরু করেছেন।


কিহ্! আমি শুরু করেছি?


তা নয়তো কি আমি শুরু করেছি নাকি? নিজের দোষ দেখেন না শুধু অন্যের দোষটাই দেখেন।


তুমি মনে হয় ধোয়া তুলসি পাতা। তালি কিন্তু এক হাতে বাজে না। সেটার জন্য আরেকটা হাতের প্রয়োজন হয়। প্রথমে যখন আমিই শুরু করলাম তাহলে তুমি চুপ থাকতে, তাহলেই তো আর ঝগড়াটা বাজত না। তা না করে তুমি ও তো আমার সাথে শুরু করেছে। তো এখন দোষ কি আমার নাকি আমাদের?


এক মহিলা এক বুজুর্গের কাছে তার স্বামীর ব্যাপারে শেকায়ত করল যে, আমার স্বামী আমাকে প্রতিদিন প্রহার ও বকাঝকা করে। আপনি কিছু একটা করুন। বুজুর্গ এক বোতল পানি দিয়ে বললেন, এগুলো প্রতিদিন খাবেন। স্বামী যতই প্রহার করুক, বকাঝকা করুক; আপনি চুপ থাকবেন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কথামতো সে কাজ করতে লাগল। কিছুদিন পর মহিলাটি আবার বুজুর্গের কাছে এসে বলল, আপনার পানি পড়া কাজে দিয়েছে। কিছুদিন আমাকে বকাঝকা করলেও এখন আর করে না। কথা শুনে বুজুর্গ মুচকি হেসে বললেন, আমার পানি পড়া কাজ দেয়নি। দিয়েছে আপনার চুপ থাকা। কারণ আপনার স্বামী বকাঝকা করলেও আপনি ছিলেন চুপ। আগে আপনি স্বামীর মুখের ওপর কথা বলতেন, তাই ঝগড়া দিন দিন বেড়েই চলত। চুপ থাকার ব্যাপারে একটি হাদিসও আছে। রাসুলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি চুপ থাকে সে মুক্তি পায়।’ (তিরমিজি : ২৭৯) - (কপি)



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২