বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২
#বেপরোয়া_প্রেমঘোর
লেখকঃ গল্প ভান্ডার
পর্ব ২
আদি আবারও জিজ্ঞেস করলো—
—'কথা বলছিস না কেন!কার জন্য হাত কে'টেছিস বল?কে তোর এত আপন হয়ে গেলো!উত্তর দে! '
আদিবা কপাল চেপে ব্যথা সহ্য করে নিয়ে বললো,
—'ভাইয়া আমি কেন হাত কা'টতে যাবো বলুন?আপনি কি বলছেন এসব?মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?আমি তো...'
আদিবাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদি আবার চিৎকার করে উঠে বললো,
—'মিথ্যে বলছিস!তোর এত বড় সাহস তুই এখন আমার সামনে মিথ্যে বলছিস। তুই যদি হাত নাই কা'টিস তবে হাত কিভাবে কা'টলো হ্যাঁ?তোর হাতে র'ক্ত কেন তবে?আর এই বিছানায় এত র'ক্ত এলো কোথা থেকে বল?'
—'ভাইয়া আমার কথাটা তো শুনুন। আমাকে আগে বলতে দিন প্লিজ।'
এরই মধ্যে চিৎকার শুনে আদির মা রিয়া চৌধুরী এসে দরজা ধা'ক্কানো শুরু করলো।আদি দাঁত কিড়মিড় করতে করতে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আদির মা ওকে জিজ্ঞেস করলো,
—'কি হয়েছে?এত চিৎকার করছিলি কেন তুই?'
বলতে বলতেই তিনি ঘরের ভেতর ঢুকে আদিবার কপালে ও হাতে র'ক্ত লেগে থাকতে দেখে আঁতকে উঠলেন!
আদিবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
—'কি হয়েছে মা!তোর এই অবস্থা কি করে হলো?আদি তুই কি করেছিস ওর সাথে? '
—'সেটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে তোমার আদরের বউমাকে জিজ্ঞেস করো সে কেন বাসর ঘরে বসে অন্য ছেলের জন্য হাত কে'টেছে।'
—'আদি এসব কি বলছিস। ও হাত কা'টতে যাবে কেনো। সে রকম কিছু হলে তো আগেই বলতো আমাদের। '
—' আমার ভয়ে বলতে পারেনি মা। না করতে পারেনি বিয়েতে।কিন্তু দেখো অন্যের জন্য হাত কে'টে ঠিকই আমার বাসর রাতটা ন'ষ্ট করে দিলো।এরপর হয়তো বাকি দিনে পরকীয়া করার ইচ্ছে আছে।'
এ কথা শুনে আদিবা কিঞ্চিত গলা উঁচু করে বলে উঠলো,
—'অনেক বলেছেন মিঃ আদিত্য চৌধুরী। এবার তো একটু থামুন প্লিজ।এত নোংরা ভাবনা আপনি আমাকে নিয়ে ভাববেন আমি কল্পনাও করতে পারিনি।ওয়াশরুমে যখন ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম তখন পানির ট্যাপের সাথে লেগে একটা কাঁচের চুড়ি আমার হাতে বিঁধে গিয়েছিলো আমার হাতে আর সেজন্যই হাত থেকে র'ক্ত পড়ছে আর বিছানার র'ক্তগুলো...'
বাকিটুকু না বলেই সে আদির মার দিকে তাকালো। তিনি হয়তো আদিবার নীরব অসহায়ত্ব বুঝতে পেরেছেন।তিনি চিৎকার করে আদিকে বললেন,
—'আদি তুই কি আদৌ মানুষ? কোনো কিছু না জেনে কিকরে মেয়েটার ওপর এত চোটপাট করলি তুই। কপাল ফে'টে র'ক্ত বের হচ্ছে মেয়েটার। ছি আদি!বাসর রাতে কিনা তুই বউ মা'রার মতো কাজ করলি! সরে যা চোখের সামনে থেকে।এক্ষুনি বের হ! '
—'আরে মা তুমি আমার ওপর রাগ করছো কেন?ও মিথ্যে বলছে মা। হাত তো ওয়াশরুমে যাওয়ার পর কে'টেছে বলছে কিন্তু বিছানায় র'ক্ত তো তার আগে থেকেই ছিলো।'
—'আদি তুই এক্ষুনি এই ঘর থেকে বের হ!বোধবুদ্ধিহীন ছেলে একটা।মিনিমাম কমনসেন্সটুকুও নেই তোর মাঝে।কি অবস্থা করেছিস মেয়েটার।ছি!আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে।তুই আর একটা কথাও না বলে এক্ষুনি ঘর থেকে বের হ। '
আদি আর কি করবে।সে আদিবার দিকে কঠোর চোখে তাকিয়ে মার কথা মেনে ঘরের বাইরে চলে গেলো।আদির মা রিয়া চৌধুরী ঘরের দরজা আঁটকে আদিবাকে ধরে খাটে এনে বসালেন।আদিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—'আমাকে ক্ষমা কর মা।আদির এই আচরণের জন্য আমি দুঃখিত। '
—'চাচি তুমি কেন ক্ষমা চাইছো।এসব বলো না চাচি।উনি হয়তো ভুল বুঝেছে এটা আমি বুঝতে পারছি। আমি কিছু মনে করিনি চাচি।'
—'আমি জানি মা। কিন্তু তুই অনেকটা ব্যথা পেয়েছিস।আদিকে তো চিনিসই।সবসময় তোকে নিয়ে ভয়ে থাকে আর ওর যা রাগ।সেজন্য হয়তো একটু রাগারাগি করে ফেলেছে।তুই কিছু মনে নিস না মা।তুই যা শাড়িটা চেঞ্জ করে আয়।আমি বিছানার চাদরটা বদলে দিচ্ছি। '
আদিবা একটা পাতলা সুতির শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আদির মা বেডশিট চেঞ্জ করে দরজা খুলে দেখলো আদি একদম দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে।তিনি বের হতেই আদি জিজ্ঞেস করলো,
—'মা ও তোমাকে বলেছে ও কেন হাত কে'টেছে?'
রিয়া চৌধুরী রেগে গিয়ে বললেন,
—'তুই কি আসলেই গর্দভ আদি?একটা মেয়ের কখন ব্লিডিং হয় তুই বুঝিস না?মেয়েটা যখন পিরিয়ডের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলো তখন দেখিসনি?'
আদি মূহুর্তে হতভম্ব হয়ে গেলো।এত বড় ভুল সে কি করে করলো।ভুলভাল ভেবে কিনা সে তার আদিবাকে এতটা আঘাত করলো।এখন কি হবে!আদিবা তার সাথে স্বাভাবিক হতে পারবে তো?আদি তার মাকে বললো,
—'আমি এতবড় ভুল কি করে করলাম মা।এখন কি হবে?ও নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে।আমি এখন ওর সাথে কথা বলবো কোন মুখে।'
—'আমি কি জানি।নিজে বাড়াবাড়ি করেছিস এখন নিজে বোঝ।যা গিয়ে ওর কাটা জায়গাগুলো ব্যান্ডেজ করে দে আর রাগ ভা'ঙ্গা।আমি ঘুমোতে গেলাম।'
এই বলে আদির মা চলে গেলো।আদিও চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ঘরে ঢুকলো।বিছানার ওপর বসে আদিবার অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই লাল শাড়ি পরে বেরিয়ে এলো আদিবা।মাথার টাওয়েল পেঁচানো। শাওয়ার নিয়েছে সে। আদিবাকে দেখে আদির মনে হলো হুট করে যেন তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে।অপলক তাকিয়ে রইল সে সদ্য ফোটা লাল গোলাপটির দিকে।
চলবে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন