তুমি আসবে বলে পার্ট ৪

#তুমি আসবে বলে


# নুসাইবা ইভানা 


পর্ব-৪


আরহার ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যের দিকে। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আরহার বুকটা ধক করে উঠলো 


কোন রকম বিছানা ছেড়ে উঠে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসলো দরজার দিকে দরজা খুলতেই আলো এসে পড়লো আরহার মুখের উপর। বাহিরে উঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। পুরো বাড়িতে পিনপতন নীরবতা।দেয়াল ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। এক পা, এক পা করে এগিয়ে এসে আশে পাশে তাকাচ্ছে কিন্তু কোথাও কেউ নেই। দু'হাত দিয়ে পরনের জামাটা খামচে ধরেছে ভয় করছে ভিষণ।আরো একটু সামনে এগিয়ে আসলো না কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিন্তু কোথাও কেউ নেই। হঠাৎ নিচে তাকিয়ে চিৎকার করলো আরহা। 


আরহার চিৎকার শুনে দুজন সার্ভেন্ট বেরিয়ে আসলো ভয়ে আরহার শরীর কাঁপচ্ছে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা সার্ভেন্ট আরহাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো। আরএকজন এক গ্লাস পানি এনে আরহাকে খাইয়ে দিলো। 

এতোটুকু মেয়েটার জীবনে কত ট্রাজেডি একের পর এক বিষাদ। 


লন্ডনের একটা ক্লাবে বসে আছে সামিরা আর তার বন্ধুরা। মূলত আজ সামিরার বার্থডে উপলক্ষে একটা পার্টি থ্রো করেছে। যদিও মনটা ভীষণ খারাপ সামিরার ভেবেছিলো অন্তত আজকের দিনে মেঘ তাকে কল করে বার্থডে উইশ করবে, বা একটা ছোট টেক্সট করবে! কিন্তু দূর্ভাগ্য তার এখন পর্যন্ত মেঘের কোন কল বা টেক্সট কিছুই আসেনি বারবার মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করছে সামিরা। মন বলছে মেঘ তাকে টেক্সট করবে। সামিরার ফ্রেন্ড এনা এসে বললো আর কত অপেক্ষা করবি! হয়তো মেঘ ব্যস্ত আছে!  


- বলতো এতো কিসের ব্যস্ততা যে একটা ছোট টেক্সট করা যায় না। জানিস ওকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে একটু একটু করে ওর প্রতি দূর্বল হচ্ছি। সব সময় ওর আশেপাশে থাকি যাতে করে ও অন্য কারো না হতে পারে! যেদিন থেকে বাংলাদেশ চলে গেছে সেদিন থেকেই মনে শান্তি পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে আমি মেঘকে হারিয়ে ফেলবো। 

- পাগল হয়েছিস তুই! ভালো করেই জানিস মেঘ পড়া লেখা নিয়ে কত সিরিয়াস সো যে পর্যন্ত পড়া লেখা শেষ না হচ্ছে নো টেনশন টু ফূর্তি। 


আচ্ছা এ্যনি তুই কখন কাউকে একতরফা ভালো বেসেছিস? 

- শোন এ্যনির ডিকশনারিতে কোন একতরফা দু'তরফা নেই। কারণ এ্যনি এক মাসের বেশি কারো সাথে স্থায়ী হতে পারে না। আমার কাছে মনে হয় এসব ভালোবাসা টালোবাসা বলতে কিছুই নেই। যাস্ট টাইম ওয়েস্ট। যে আছে ভালো নেই আরো ভালো। 

- শোন যেদিন সত্যি কাউকে ভালোবাসবি সেদিন বুঝতে পারবি। কোন একজনের মুগ্ধতায় আটকে গেলে, কারো ব্যক্তিত্বের প্রেমে পরলে, কারো মায়ার জালে নিজেকে বেঁধে ফেললে সে কি সুখকর অনূভুতি। সে মেসেজ করবে না জেনেও বারবার তার মেসেজের অপেক্ষা করা। লুকিয়ে তার প্রোফাইলে যেয়ে তার ছবি দেখা। নিজের আইডির চেয়ে তার আইডিতেই বেশী পরে থাকা। সে আমার হবে নাকি সন্দেহ থাকার পরেও রোজ রাতে তাকে নিয়েই রঙিন স্বপ্ন দেখা। এগুলো হলো ভালোবাসা। বিপরীত পাশের মানুষটা এসব অনুভূতি থেকে অজানা তারপরেও তাকে নিয়ে ভাবতেই ভালো লাগে। 

- তোর এতো বড় বড় কথা আমার মাথায় ঠুকবে না। তার চেয়ে চল কেক কাটবি সবাই অপেক্ষা করছে। 


নিরব অশ্রু গুলো টিস্যু দিয়ে মুছে কৃত্রিম হাসির রেখা মুখে টেনে এগিয়ে গেলো কেক কাটতে। পৃথিবীটা বড়ই আশ্চর্য কারো হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত কষ্ট গুলো কারো দৃষ্টিতে পরে না। সবাই তার উপরের হাসিটাই দেখে। 


হসপিটালের আইসিইউ রুমের সামনে পায়চারি করছে মেঘ। গ্রে রঙের শার্টটা রক্তে ভিজে আছে এই মূহুর্তে ইচ্ছে করছে মেয়েটা কে*টে টু*ক*রো টু*ক*রো করতে। না এই মেয়ে তাদের জীবনে আসতো আর না এই দিনটা দেখতে হতো। মেঘ নিজের বাবার পাশে বসে পরলো। বাবার হাত দু'টো নিজের হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে অপরাধী কন্ঠে বললো, বাবা মমের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। প্লিজ তুমি মমকে দ্রুত ঠিক করে দাও। এই দেশ আমাদের জন্য সুখকর না। আমরা কালকেই চলে যাবো বাবা। 


মোর্শেদ আফরোজ নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, একবার ভুল করেছি সেই ভুল আর করবো না। তুমি চাইলে চলে যেতে পারো। আমি আর তোমার মম এখানেই থাকবো। 

-হ্যঁ তোমাদের কাছে আমার চেয়ে ওই মেয়েটাই বড়। দু'দিনের পরিচয়ে এতো আপন হয়ে গেলো বাবা! যে নিজের ছেলের কষ্ট চোখে পরছে না। 


- দেখো তোমার সাথে কথা বলার মতো মানসিকতা এই মূহুর্তে আমার নেই! তুমি একবারের জন্য মনে করেছো তোমার ভুলের কারনে তোমার মম মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে! এই দিন দেখার জন্য তোমাকে বড় করেছিলাম। দেখো এটাই ভালো হবে তোমার জন্য তুমি এখান থেকে চলে যাও। 


বাবা আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। তবে তোমরাও তো ভুল করছো কোথাকার কোন মেয়ের জন্য নিজের ছেলেকে পর করে দিচ্ছো। 

- দেখো তোমার সাথে আমি কথা বলতে চাইছি না। আর যা জানোনা তা নিয়ে কথা বলো না। 

মেঘ আর কথা বাড়ালো না। এই মূহুর্তে তার মমের ঠিক হওয়াটা বেশী জরুরি। 

এর মধ্যেই আইসিইউ রম থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসলো। মেঘ ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলো, আমার মমের কি অবস্থা!  


- দেখুন প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। যদিও এখন বিপদ থেকে মুক্ত তবুও ওনাকে কোন রকম পেসারে রাখা যাবে না। কোন বিষয় নিয়ে যেনো উত্তেজিত হয়ে না পরে সে বিষয় সর্তক থাকতে হবে!

- জ্ঞান ফিরবে কখন!

- দু'ঘন্টা পর। আর এখন রুগীর সাথে বেশি কথা বলবেন না। 

- মেঘ নিস্তব্ধ কি করবে সে? তার বাবা মায়ের কথা মতো টিসি নিয়ে চলে আসবে বাংলাদেশ! নাকি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চলে যাবে লন্ডনে। 


সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে। একদিকে বাবা,মা তো অন্য দিকে নিজের স্বপ্ন কোনটাকে বেছে নেয়া উচিৎ? 


কখন থেকে মেঘের ফোনে কল করেই যাচ্ছে ইমতিহান, কিন্তু মেঘ রিসিভ করছে না। 


কি মনে করে পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই প্রথমে চোখে পরে সামিরার চারশোর মতো মিসড কল আর কত গুলো মেসেজ এসেছে তার হিসেব নেই।সমািরার মেসেজ সিন করবে, এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠলো, রিসিভ করতেই ইমতিহান বললো,কি রে এতো বার কল করছি রিসিভ করছিস না কেনো? 

- মেঘ সবটা বললো, ইমতিহানকে। শুধু আরহার সাথে বিয়ে হওয়ার কথাটা চেপে গেলো। 


সব শুনে ইমতিহান বললো, তাহলে তুই এখন কি করবি? বাংলাদেশে থেকে যাবি!

- বুঝতে পারছি না। আচ্ছা পরে কথা হবে।কলটা কেটে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। সামিরার কল,মেসেজ চেক করতে ভুলেই গেলো। দু'হাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো চেয়ারে। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত মেঘ। তার সাথে আরহার প্রতি রাগ ক্ষোভ। মনে মনে ভাবছে তাদের সাজানো পরিবারটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে আরহা।


বেশ খানিকটা সময় পর আরহা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,এখানে এতো রক্ত কিসের? আর উনারা সবাই কোথায়? 


একজন সার্ভেন্ট বলে উঠলো,কোথায় আবার হসপিটালে বড় ম্যডামের অবস্থা বেশী ভালো না। কে যানে কি হয়!


মধ্যে বয়সী সার্ভেন্ট মহিলাটি বললো, থামতো নিলু তোকে এসব কথা কে বলতে বললো, শুনো মেয়ে তেমন কোন সমস্যা হয়নি ম্যডাম একটু অসুস্থ তাই হসপিটালে গিয়েছেন চলে আসবেন সময় মতো। আর শুনো তুমি ফ্রেশ হও আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি। তোমার তো ঔষধ খেতে হবে! 


- আমি একা উপরে যাবো না আমার ভয় হয়। আমি এখানেই থাকবো। এখানে রক্ত কিসের? 


- তেমন কিছুনা কাজ করতে যেয়ে নিলুর পা কে*টে গেছে। তুমি বসো আমি এক্ষুনি পরিস্কার করে দিচ্ছি। 


আরহার ছোট মাথা এটা বুঝতেই পারলো না তার অগোচরে তার কারণে ঠিক কতটা ঝড় বয়ে গেছে। 


এদিক সেদিক তাকাতে হঠাৎ চোখ গেলে সোফায় পরে থাকা একটা ছবির দিকে। হাত বাড়িয়ে সেটা হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবিটির দিকে চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে অশ্রু। ছোট মনে উঁকি দিচ্ছে নানা প্রশ্ন?


#চলবে 


ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 


হ্যাপি রিডিং 🥰

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২