তুমি অসবে বলে পার্ট ৭

 

#তুমি আসবে বলে


#নুসাইবা ইভানা 


পর্ব -৭


আরহা শুয়ে শুয়ে ভাবছে কে এই ছোট সাহেব? তাকে যে আমি চোর সম্মোধন করলাম, এটা যেনে আন্টি যদি আমার প্রতি রেগে যান! আবার হাতে কামড়ও দিয়েছে, সকালে উঠে ক্ষমা চাইতে হবে। শুয়ে থেকে এপাশ ওপাশ করছে ঘুম আসছে না। উঠে বসলো এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজত লাগলো না কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পাওয়া গেলো না। হতাশ হয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পরলো, তার মা বলেছিল, রাতে ঘুম না আসলে চোখ বন্ধ করে আল্লাহ তায়ালার নাম স্বরণ করতে। তাই করছে আরহা। 


নীলুর মা মেঘের দরজায় কড়া নেড়ে বললেন আসবো বাবা, 

- হাতে থাকা চুড়িটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলে আসুন। 

- তোমার খাবার রেখে গেলাম খেয়ে নিও, আর কিছু লাগলে আমাকে বলো।আমি বউ মায়ের রুমে আছি।

- এই কথাটা ঠিক পছন্দ হলো না মেঘের ওই টুকু বাচ্চা মেয়েকে বউমা বলে সম্মোধন না এটা মানা যায় না। 

- আপনি ওকে নাম ধরেই ডাকবেন একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বউমা ডাকটা ঠিক যায় না। 

- নীলুর মা অসম্মতি জানিয়ে বললেন, তা কি কথা বাবা। বয়স যাইহোক সে তো এখন এই বাড়ির বউ তাকে তো সম্মান দিতেই হবে।

- সম্মান দিবেন সেটা তো মানা করছি না শুধু বাউমা ডাকবেন না। 

নীলুর মা আর কথা বাড়ালেন না। চলে আসলেন আরহার রুমে। আরহা ততক্ষণে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। নীলুর মা নিচে বিছানা পেতে শুয়ে পরলেন। 


মেঘ খাবার খেয়ে নিলো, তার পছন্দের চিংড়ী মাছের মালাই কারি, পটলের দোলমা,সাজনার ডাল,কসা মাংস আর সবছি, তৃপ্তি করে খেলো মেঘ। খাবার রেখে একটু বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে রাতে খাওয়ার পর সাথে সাথে শুয়ে পরা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। তাই খানিকক্ষণ পায়চারি করছে। হাতের ব্যথাটা কমার বদলে বেড়েছে। হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, মানুষ বিয়ের পর লাভ বাইট পায়। আর আমি রাক্ষসী বাইট পেয়েছি সবই কপাল। এমন সময় মেঘের ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো ভ্রুকুঞ্চিত করে হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিলো। 

সামিরা নামটা জ্বলজ্বল করছে এই মূহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বাজতে বাজতে থেমে গেলো স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। তবে আবার বেজে উঠলো ফোনটা এবার রিসিভ করে বলে, কোন সমস্যা সামি! 

- এভাবে বলছিস কেনো তোকে কি কল করা যাবে না এতো ব্যস্ত তুই! 

- হেয়ালি না করে কি বলবি বল।

- সামিরার মনটা খারাপ হয়ে গেলো পাহাড় সমান অভিমান জমা হলো। হতাশ স্বরে বললো কাল আমার বার্থডে ছিলো তুই ভুলে গেছিস! 

- মনে রাখার৷ কথা ছিলো?

- না তা কেনো হবে আমি কি ইম্পরট্যান্ট কেউ যে মনে রাখবি!

- হ্যাপি বার্থডে সামি। 

- থাক আর সৌজন্যতা বজায় রাখতে হবে না। এতোটাও পর করে দিস না।

- না আমার মনে ছিলো না তাই এখন বলছি।আসলে ব্যস্ত ছিলাম সারাদিন। 


- কি এমন ব্যস্ত ছিলি মেঘ?

- আম্মু হসপিটাল এডমিট 

- কি হয়েছে আন্টির? এখন কি অবস্থা? 

- এখস সুস্থ আছে। আচ্ছা রাখছি পরে কথা হবে। 

সামিরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এপাশ থেকে কলটা কেটে দিলো।ফোন টেবিলে রেখে চিন্তা করছে এই কামড়ের শাস্তি দেয়ার জন্য তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ড্রয়ার থেকে ডায়েরি বের করলো তারিখ সহ আজকের ঘটনাটা লিখে রাখলো। 

কি হাস্যকর বিষয় বাচ্চাদের মতো, আরহাকে শাস্তি দেওয়ার কথা যাতে ভুলে না যায়! তাই লিখে রাখা।


ডায়েরি জায়গা মতো রেখে ঘুমিয়ে পরলো।


সেই যে মেঘ ফোন কেটেছে তারপর থেকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এতোটা অবহেলা ঠিক মতো দুটো কথা পর্যন্ত বললো না। ঠিক আছে মানছি ও রিলেশন করবেনা তাই বলে সামিরা খানকে ইগনোর করবে! নিজেকেই নিজে বলছে, তুমি ভেবেছো সামিরা খুব সস্তা না চাইতেই পেয়ে গেছো। তুমি ভুলে যাচ্ছো "মেঘ" সামিরার পিছে এরকম হাজার ছেলে পরে আছে। ভালোবাসি তাই এতো অবহেলা সহ্য করছি। নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে বলে,তবে মনে রেখো মেঘ তুমি সামিরার না হলে অন্য কারো হতে পারবেনা। 

হতে দেবো না। কিছুতেই না।


আরহার ঘুম ভাঙলো বেলা করে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘড়ির কাটা এগারোটা পেরিছে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসলো। নিচে শুধু নীলু বসে আছে আর কেউ নেই। আরহা নীলুর পাশে বসে পরলো। 

নীলু আরহাকে দেখেই বলে,"তুমি উঠে গেছো! 

- আরহাও হেসে বলে না আমার ভূত উঠে তোমার পাশে বসেছে। 

- তা পেত্নী আপনার খুদা লাগেনি? তাড়াতাড়ি টেবিলে বসে পরো আমি খাবার দিচ্ছি। খেয়ে নাও দেখি ঝটপট বড় সাহেবেরা আসার সময় হয়ে এসেছে।

- আরহা খেয়ে নিলো।তারপর নীলুর থেকে খাতা আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে রুমে চলে আসলো। 


গুন গুন করে গান গাইছ আরহা......


একজনে ছবি আঁকে এক মনে, ও মন!!


আরেকজনে বসে বসে রঙ মাখে, ও মন!!


সেই ছবিখান নষ্ট করে, কোন জনা, কোন জনা,


তোমার ঘরে বসত করে, কয় জনা মন জানোনা,


 তোমার বসত করে কয় জনা!! 


গানের তালে তালে হাতের ডিজাইনে ফুটে উঠছে একটা সরি কার্ড 

মনের মাধুর্য মিশিয়ে কার্ড তৈরী করলো আরহা। তারপর অপরিপক্ক হাতে কিছু লিখে দিলো। কার্ডটি সম্পূর্ণ রেডি হলে বা' হাতে চোখের জল টুকু মুছে নিলো। না হলে যে কোন সময় টুপ করে ঝরে পরবে। এই গান তার মায়ের থেকে শেখা। 

কার্ডটি হাতে নিয়ে নিজের রুম থেকে বের হলো, আশেপাশের তাকিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে আসলো ছোট সাহেবের রুমে। আলত হাতে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। আবছা আলো জানালার পর্দা ভেদ করে যতটুকু আলো আসছে আরকি। পুরো রুমে চোখ বুলালো না রুমে কেউ নেই। পা টিপে টিপে বেডের পাশে আসলো, সাইড টেবেলি কার্ডটি রেখে বেরিয়ে গেলো। 

আরহাকে কেউ না দেখলেও নীলু দেখেছে। সেই যে আরহা উপরে এসেছে তখন নীলু চুপিচুপি এসেছে, আরহা কি করে তাই দেখতে। তবে আরহার গান শুনে নীলু মুগ্ধ। আরহার কর্মকাণ্ড দেখে নীলু মুখ টিপে হাসলো।আরহা দেখার আগেই সরে আসলো। 


হসপিটাল থেকে মিসেস মারিয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে মেঘ,আর মোর্শেদ আফরোজ। এমন সময় মেঘের ফোনে ইমতিহানের কল আসলো। ইমতিহান নামটি দেখেই দ্রুত কল রিসিভ করলো। 

ইমতিহান বললো,কিরে আন্টির কি অবস্থা এখন? 

- ভালো, আজকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। 

- তাহলে তো তুই আমার কাজটা করে দিতেই পারিস! 

- কেমন কাজ সেটা তো বল

- শোন আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে ঠিক করছে ওর বাবা, মা, তুই বিয়েটা আটকে দিবি।

- তোর গার্লফ্রেন্ড? সেটা আবার কবে আবিষ্কার হলো।

- মজা নিস না এখন প্যারায় আছি। আমি ঠিকানা দিচ্ছি তুই এখনি যা।

- দেখ আবার কিছুক্ষণ পর বলিস না আমার গার্লফ্রেন্ডের হ্যাসবেন্ড হয়ে যা। হাসতে হাসতে বলে ফেললো আমি কিন্তু আলরেডি ম্যরিড।

- কিহহহহহ, কবে, কখন, কাকে বিয়ে করলি?

- মেঘ বুঝতে পারলো কি বলতে কি বলে ফেলেছে। তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল,আমি বোঝাতে চাইলাম পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে তোর গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে যাবো কোন সুখে। 

- তোকে বিয়ে করতে কে বললো ভাই! তুই যা আর যে ভাবেই হোক বিয়েটা ভেঙে দিবি, তাহলেই বুঝবো তুই আসলেই জিনিয়াস। 

- আর কিছু বলতে হবে না তুই শুধু দেখতে থাক মেঘের কামাল।

কল কেটে বাবা, মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে মেঘ রওনা হলো ইমতিহানের দেয়া ঠিকানায়। 


হিয়া সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে। ইমতিহানের ফ্রেন্ডের জন্য এখনো আসার নাম নেই। হিয়া নিজের ফোন থেকে ইমতিহানকে কল করলো,সাথে সাথে রিসিভ, ইমতিহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হিয়া বলা শুরু করলো,ওই তুই কি আমার সাথে ধোঁকা বাজি করছিস একঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি কই তোর বন্ধু! তুই সত্যি আমাকে ভালোবাসিস তো? নাকি এই দু'বছর ধরে টাইম পাস করছিস। কথা বলছিস না কেনো কথা বল 

-তুমি এভাবে বলতে পারলে জান! আমার ফ্রেন্ড যাচ্ছে তোমার কাছে সত্যি বলছি।জান, ওই জান শুনো।

- এতো ন্যকামি না করে বলে ফেলো। 

- আমার ফ্রেন্ডের সাথে প্লিজ একটু ঠান্ডা মাথায় কথা বলো। তোমার যা রাগ দেখানোর আমাকে দেখাইয়ো। 

- হইছে তোমার আর বলতে হবে না আমি চেষ্টা করবো। এবার বলো আর কত ওয়েট করবো!

- আর অল্প কিছু সময় জান। চলে আসবে। 


মেঘ গাড়ি পার্কিং করে পার্কে ডুকলো এদিক সেদিক তাকাচ্ছে না ব্লু রঙের ড্রেসে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। নিজের ফোন বের করে ইমতিহানের দেয়া নম্বর ডায়েল করলো। 


ওপাশ থেকে রিসিভ করেই বলা শুরু করলো,কোন ছা*গ*ল, পা*গ*ল তুই দেখছিস ফোন ওয়েটিং তাও কল করেই যাচ্ছিস। 

নিজেকে শান্ত রেখে মেঘ বললো,ম্যডাম আমি ইমতিহানের ফ্রেন্ড কাইন্ডলী যদি আপনার অবস্থান সম্পর্কে বলতেন, তবে এই অধমের জন্য উপকার হতো!

- সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি। আমি পার্কের ডানদিকে কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে আছি। হোয়াইট ড্রেস পরা। 


মেঘের রাগ হলো, বললো ব্লু ড্রেস এখন বলে হোয়াইট! 

রাগে দু'ভ্রুর মাঝে ভাজ পরলো। বিরক্তি নিয়ে পা'বাড়ালো সামনের দিকে.....


#চলবে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২