তুমি আসবে বলে পার্ট ৩


#তুমি আসবে বলে


#নুসাইবা ইভানা 


পর্ব -৩


মেঘ বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ী নিয়ে যেদিকে দু' চোখ যাচ্ছে সেদিকেই ড্রাইভা করছে। ঢাকা শহরের রাস্তা সকাল ছাড়া এমন ফাঁকা পাওয়া যায় না। ড্রাইভিং করতে করতে অনেকটা দূরে চলে এসেছে। নিজের প্রতি চরম  বিরক্ত মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে গাড়ি সাইট করে রেখে নদীর তীরে যেয়ে বসল। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অস্থির পানির দিকে, মনে মনে কিছু হিসাব মেলাতে ব্যস্ত অবশেষে দু'য়ে দুয়ে চার মিলয়ে ফেললো। দ্রুত নিজের সেল ফোন বের করে এয়ার এজেন্সিতে কল করে তিনটি ইমারজেন্সি টিকিট বুক করলো। এবার নিজেকে হালকা লাগছে। গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় উদ্দেশ্য রওনা হলো। 


মিসেস মারিয়া কখন থেকে আরহার মাথা নিজের কোলে রেখে বসে আছে। আরহাও মিসেস মারিয়ার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। নিষ্পাপ মেয়েটির মুখের পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মিসেস মারিয়া। মনেমনে ভাবছেন একদম মায়ের কার্বন কপি। সেই চোখ সেই চেহারা সেই মায়াবী মুখ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন বিষাদ ছেয়ে গেলো হৃদয়ে। কি হওয়ার কথা ছিলো আর কি হচ্ছে। জীবন আসলেই নাটকের মঞ্চ ঠিক কখন কোন মূহুর্তে ইইউ টার্ন নেয় দর্শক বুঝতেই পারে না। 


ঘন্টা খানিক পর পিট পিট করো চোখ খুলছে আরহা নিজের মাথা কারো কোলে দেখে ভেবে নিলো সে তার মায়ের কোলে মাথা রেখেছে। তাই দু' হাত দিয়ে মিসেস মারিয়ার কোমর শক্ত করে ধরে বলে আর কোথাও যেতে দেবো না তোমাকে!


আরহার কথা শুনে মিসেস মারিয়া বললেন, তোকে রেখে আর কোথাও যাচ্ছি না। 


অপরিচিত কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই সরে আসে আরহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সে এখন কোথায়!  মিসেস মারিয়া আরহাকে বলে আমি তোর মারিয়া আন্টি। তোর মায়ের মুখে আমার নাম শুনেছিস নিশ্চয়ই! 

- আরহা ছোট করে বলল,হুম 

মিসেস মারিয়া আরহাকে নিয়ে উপরে আসলেন নিজের রুমের পাশের রুমেই আরহার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কিছু রেডিমেড ড্রেস আনিয়েছেন সেখান থেকে একটা ড্রেস আরহার হাতে দিয়ে বললেন ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। 


মিসেস মারিয়া চলে যেতেই আরহা অবাক দৃষ্টিতে রুমটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো এমন সুন্দর সাজানো গোছানো রুম আরহা আর দেখেনি একটু এগিয়ে এসে জানালার পর্দা গুলো ছুঁয়ে দেখলো। ছোট মস্তিষ্কে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। 

আর একটু সামনে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ালো এতো বড় আয়না দেখে হতবাক হয়ে গেলো তার বাসায় তো ছোট একটা আয়না ছিলো যেটা দিয়ে কোনমতে মুখটুকু দেখা যায়!  আরহা নিজেকে দেখতে লাগলো পরনে তার লাল খয়েরী রঙের একাটা কাতান শাড়ী গলায় একটা মোটা চেন,কানে এক জোড়া ঝুমকো, হাতে চুড়ি যদিও চুড়ি গুলো এতো বড় যে খুলে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা 

আরহার মনে পড়লো তারতো কাল রাতে বিয়ে হয়েছে 


মনে করার চেষ্টা করছে সে যদি বউ হয় তাহলে বর কোথায়? ছোট মস্তিষ্ক এখন বর খোঁজার চেষ্টা করছে 


মিসেস মারিয়া খাবার নিয়ে এসে দেখেন, আরহা গভীর চিন্তায় মগ্ন। তিনি একটু কাশি দিয়ে বললেন, এতো কি ভাছিস!  এখনো ফ্রেশ হোসনি যা যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় এইটুকু মাথায় আর পেশার দিতে হবে না।

আরহার খুব জানতে ইচ্ছে ছিলো তার বর কোথায়!  কিন্তু কিছুই মুখ থেকে বের হলো না। ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো। ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো আরেক বিপদে এখানে তো পানিই নেই এটা ওটা নাড়াচাড়া করেও পানি বের করতে পারছেনা মনটা খারাপ হয়ে গেলো।  কিছু সময় একি ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ওয়াশরুমের দরজা খুলে উঁকি দিলো 

মিসেস মারিয়া বেডে বসেছিলেন আরাহাকে দেখে বললেন,কিছু লাগবে?

- মাথা নাড়িয়ে একবার হা তো আর একবার না বলছে 

মিসেস মারিয়া উঠে এসে বললেন, তুই আমাকে নিজের মায়ের মতো ভাবতে পারিস!  বিনা সংকোচে বলে ফেল দেখি কি লাগবে? 

- কিছু সময় চুপ থেকে আস্তে করে বললো এখানে তো পানি নেই, আমি ফ্রেশ হবো কি করে?


- আরহার কথা শুনে বুঝতে বাকি নেই এসব আধুনিকতা আরহা এখনো দেখেনি তাই বুঝতে পারছে না। মিসেস মারিয়া বলেন দাঁড়া আমি আসছি 


মিসেস মারিয়া এসে আরহাকে সব দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। 


আরহা শাওয়ার অন করে তার নিচে দাঁড়িয়ে পরলো শাড়ীটা খুলে পাশে রাখলো। শরীরের বেশীর ভাগ স্থান জ্বলে যাচ্ছে আরহার আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না সরে আসলো নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলো। কতটা রাগ থাকলে কেউ এরকম নির্মম ভাবে মারতে পারে। কোন রকম ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে আসলো সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝড়ছে। 


মিসেস মারিয়া আরহার এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলেন আরহাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে স্নেহ মাখা কন্ঠ শুধালেন, কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বল! তার চোখেও অশ্রু টলমল করছে। 


আরহা কথা বলবে সেই অবস্থায় নেই কেঁদেই চলেছে। 

মিসেস মারিয়া মলম নিয়ে আরহার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে দিচ্ছে। আরহা অস্ফুট স্বরে বললো আর দিও না ম*রে যাবো। কোনমতে মলম লাগিয়ে দিলেন। হাত ধুয়ে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বললেন, তুই একটু ঘুমিয়ে থাক তাহলে ব্যথা অনুভব হবে না। মিসেস মারিয়া উঠে আসলেন আর সহ্য করতে পারছেন না বাচ্চা মেয়েটার কষ্ট। 


নিজের রুমে এসে তার হ্যাসবেন্ডকে আঁকড়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন যার রানী হয়ে থাকার কথা ছিলো?আর সে? কেনো এমন হলো মোর্শেদ, আমি সহ্য করতে পারছিনা এই একরত্তি মেয়ের জীবনে এতো কষ্ট! মোর্শেদ আফরোজ নিজের ওয়াইফকে শান্তনা দিয়ে বললেন তুমি চিন্তা করো না আরহার ভবিষ্যৎ আমরা সুন্দর করে তুলবো অতীতের সব কষ্ট ভুলে রাজকন্যাদের মতো বড় হবে আমাদের আরহা। 


আরহার চোখে ঘুম নেই একে তো অসহ্য যন্ত্রণা অন্য দিকে নিজের মায়ের মৃত্যুর শোক সাথে আবার যোগ হয়েছে বরকে দেখার চিন্তা। ছোট মস্তিষ্কে জ্যম লেগে গেছে। মনে মনে হিসেব মেলাচ্ছে যাদের বাড়ি রাজপ্রাসাদের মতো সে দেখতেও তো রাজপুত্রের মতো!  আরহার মনে পরে গেলো তার মায়ের কথা একদিন তার মা তাকে বলেছিল এক রাজপুত্র এসে তাকে আর তার মাকে মুক্ত করবে এই কষ্ট থেকে!  আরহার রাগ হলো ভিষণ রাজপুত্র না হোক কেউ তো আসলো সেই বা রাজপুত্রের যেয়ে কম কি তবে এতো দেরি করলো কেনো আসতে! এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে আরহা তার খবর নেই। 


আরহার মামি সোনিয়া বেগম নিজের স্বামীকে বলছেন, কত বড় বড় কথা বলেছিলে তোমার ভাগ্নীর নামে এতো এতো সম্পদ আছে এই আছে সেই আছে এতো বছর ধরে আমাদের ঘাড়ের ওপর বসে বসে খেয়ে এখন নবাবজাদী পালিয়েছে। তোমার কথা বিশ্বাস করাই আমার উচিৎ হয়নি! তোমার বোন মরার সাথে সাথে বেঁচে দিলে ভালো হতো আপদটাকে। সব লস হলো আমার এতোদিন বসে বসে দুধ, কলা খাইয়ে কাল সাপ পুষলাম সময় মতো ছোবল দেবে বলে! তুমিও শুনে রাখো "হায়দার"তোমার ভাগ্নী কি করে সুখে থাকে তা আমি দেখে ছাড়বো।


হায়দার আর সয্য করতে পারলোনা উঠে এসে সোনিয়ার গলা চে*পে ধরে বলে, মেয়েটা গরুর মতো পিঠিয়ে তোর স্বাদ মেটেনি! একটা দিনও তুই আমার অসুস্থ বোন আর মেয়েটাকে শান্তি দিসনি এখনতো চলে গেছে এখন মুক্তি দে। তা না  এখনো মেয়েটার ক্ষতি করার চেষ্টায় আছিস! সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে সোনিয়াকে ফেলে রেখে ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। 


অনেক চুপ থেকেছেন নিজের চোখে বোন আর বোনের মেয়েটাকে অত্যাচারিত নিপিড়ীত হতে দেখেছেন প্রতিবাদ করতে পারেননি কারণ হায়দারের সেরকম কোন ইনকাম নেই। সোনিয়া দর্জি কাজ করে যা পায় তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলতো। হায়দার টুকটাক দিনমজুরের কাজ করলেও অনেক সময় তাও পেতো না। যে ঝুপড়িতে থাকে সে জায়গাটুকুও সোনিয়ার বাবার দেয়া। তাই সব বুঝেও চুপ থাকতে হতো। আজ যেনো হায়দার মিয়া বাঁধন হারা। কোন পিছুটান নেই তাই হয়তো প্রতিবাদ করার সাহস পেয়েছেন! 

বুকের মধ্যে হাহাকার করছে একমাত্র বোনকে তিলে তিলে ম*র*তে দেখলেন নিজের ভাগ্নীটাকে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে দেখলেন সময়ের কাছে হেরে যেয়ে সব সহ্য করে নিয়েছেন। সময় মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়।


কোথা থেকে ঝড়ের বেগে মেঘ বাসায় আসলো কারো সাথে কোন কথা না বলে দেয়ালে টাঙানো  ফটো ফ্রেম গুলো ছুড়ে ফেলছে....


#চলবে


ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 

হ্যাপি রিডিং 🥰

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২