তুমি আসবে বলে পার্ট ৯

 

তুমি আসবে বলে


নুসাইবা ইভানা


পর্ব- ৯


আরহা রুমে এসে আয়নার সামনো দাঁড়িয়ে মেঘের মতো করে বলে,চোখ কি কপালে নিয়ে হাঁটো? চোখে দেখতে পাও না। হাত নাড়িয়ে অভিনয় করার সময় আয়নাতে খেয়াল করলো তার এক হাতে চুড়ি নেই। হাসি খুশি মুখটা মূহুর্তে চুপসে গেলো। আরহা বেডের উপর, আশেপাশে, ওয়াশরুমে, বারান্দায় সব জায়গায় খুঁজল। না পেয়ে হতাশ হয়ে বেডের পাশে বসে পড়লো কোথায় রেখেছে? এমন সময় নীলু এসে বললো তুমি এখনো গোসল করো নি? তাড়াতাড়ি যাও আরহা মুখ ভার করে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। 


মেঘ ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে বসে পরলো, টেনশনে আছে, বুঝতে পারছেনা তার এখন কি করা উচিৎ? বাব, মায়ের কথা মতো থেকে যাওয়া নাকি চলে যাওয়া! এসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ চোখ গেলো সাইড টেবিলে গ্লাসের নিচে কার্ডটির দিকে হাত বাড়িয়ে সেটি নিলো কার্ডটি খুলে ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেলো।গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। ছোট সাহেব আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আসলে আমার ইঁদুরের দাঁত তো তাই কামড়ে দিয়েছি। আর কখনো হবে না। ক্ষমা করে দিন। কার্ডটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো মেঘ। মনে মনে ভাবছে আমাকে বশ করতে চাও এতোটুকু মেয়ে মাথায় কত বুদ্ধি। কার্ডটি ছুরে ফেলে দিলো। 


হিয়া কোনমতে বাসা থেকে পালিয়ে মেঘের বাসায় চলে এসছে। তখন বিকেল প্রায় শেষ। আরহা আর মোর্শেদ আফরোজ গেছেন শপিংয়ে। মেঘ নিজের রুমে। মিসেস মারিয়া সোফায় বসে কফি খাচ্ছেন এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো নীলুর মা যেয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলেন শাড়ি পরা একটি সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলুর মা জিজ্ঞেস করলেন কাকে চাই?

-মেঘের বাসা না এটা

- জ্বি

- আমি মেঘের বন্ধুর ওয়াইফ

নীলুর মা সরে দাঁড়ালেন। হিয়া ভিতরে চলে আসলো 

মিসেস মারিয়াকে সালাম করলো। মিসেস মারিয়া সালামের জবাব দিয়ে বললেন, "কে তুমি মা?

- আমি হিয়া ইমতিহানের ওয়াইফ

মিসেস মারিয়া হিয়ার কথা শুনে অবাক হলেন কি বলে এই মেয়ে, ইমতিহান তো বিয়ে করেনি। তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো? 

- কেনো আন্টি বিশ্বাস হচ্ছে না। 

মেঘ নিচে আসছিলো কফির জন্য। হিয়াকে দেখে বলে আপনি এখানেও চলে এসেছেন?

- শুনুন কিছু বলার আগে আমার কথাটা শুনুন আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। কিছুদিন এখানে থাকবো। এর মধ্যে ইমতিহান এসে আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না। 

- মেঘ বললো,ঠিক আছে থাকবেন। তাহলে তখন কাজী অফিসে যাওয়ার কথা কেনো বলেছিলেন? 

- ভেবেছিলাম ভিডিও কলে বিয়েটা সেরে ফেলবো।

মেঘ আর কিছু না বলে, চলে গেলো। এমনিতেই আরহা নামক অশান্তি কমছিলো এখন আবার হিয়া নামক অশান্তি এসে জুটেছে। 


মিসেস মারিয়া হিয়াকে গেস্ট রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। যদিও হিয়া মেয়েটাকে তার মোটেও পছন্দ হয়নি। 


রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসলো,মিসেস মারিয়া আরহাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টা হিয়ার মোটেও পছন্দ হলো না খবার শেষ করেই মেঘ নিজের রুমে চলে গেলো। মিসেস মারিয়া সবার সাথে হিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আরহাকে নিজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিলেন। 

হিয়া তাচ্ছিল্য হাসলো মনে মনে। 


মিসেস মারিয়া আজ আরহার সাথে ঘুমোবে বলে ঠিক করলো। 


আরহা রুমে এসে শুয়ে পরলো। যাক বাঁচা গেছে ছোট সাহেব কাউকে কিছু বলেনি।কিন্তু মনে মনে চিন্তা করছে এই বাসায় সবাই আছে তাহলে আমার বরটা কোথায়? তাকে তো দেখাই হলো না। মনে মনে ঠিক করলো কাল নীলুকে জিজ্ঞেস করবে। নিজের মায়ের ছবিটা বালিশের নিচ থেকে বের করে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো। 


মিসেস মারিয়া এসে দেখেন আরহা ঘুমিয়ে আছে। আরহার শরীরে চাদর টেনে দেয়ার সময় আরহার হাতে ছবিটি খেয়াল করলেন। ছবিটি নিজের হাতে নিয়ে কিছু সময় বিষাদময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ভাবলেন জীবনের মোড় কখন কোন দিকে যায় কে বলতে পারো। গোছানো জীবনটাও হুট করে এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে! মিসেস মারিয়ার কি হলো জানা নেই হুট করে তার মনে হলো হয়তো নতুন কোন ঝড় আসবে তাদের জীবনে। আরহার রুমের দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন মেঘের রুমে। ততক্ষণে মেঘ গভীর ঘুমে। ড্রিম লাইটের হালকা আলোতো মেঘের চেহারা স্পষ্ট। মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, তুমি যদি জানতে আরহা কে?তবে অবহেলা নয় মাথায় করে রাখতে। মিসেস মারিয়া নিজের রুমে চলে আসলেন পুরোনো ডায়েরি বের করে কিছুক্ষণ পুরোনো স্মৃতি মনে করলেন। কলম দিয়ে অনেক দিন পর ডায়েরিতে কিছু লিখলেন। ডায়েরি রেখে ঘুমিয়ে পরলেন মোর্শেদ আফরোজের পাশে। হঠাৎ করে কেমন ভয় করছে মিসেস মারিয়ার সব হারিয়ে ফেলার ভয়। যে ঝড় তেরো বছর আগে সব কিছু তছনছ করে দিয়েছিলো ঠিক সেরকম ঝড়ের আগমনের আভাস পাচ্ছেন।


সকালে আরহাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হল ক্লাস এইটে। বছরের মাঝখান আবার ক্লাস ড্রপ দুটোর জন্য এখন আরহার পড়া লিখার পেশার একটু বেশী। আরহার জন্য তিন, চারটে প্রাইভেট টিউটর ঠিক করে দিলেন। 


এভাবেই খুব ভালো চলছিলো আরহার জীবন। প্রায় এক সপ্তাহ পর হঠাৎ মেঘ আরহার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলো।আরহার টিচার আরহার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘ দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেই স্যারের কলার চেপে ধরে বলে তোর সাহস হলো কি করে ওর দিকে বাজে নজরে তাকানোর? কলার ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলো ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো বাসা থেকে। পকেট থেকে কিছু টাকা ছুড়ে মেরে বলে, তোদের মতো কিছু মানুষের জন্যই আজকাল কেউ টিচারদের বিশ্বাস করতে পারেনা। 

ততক্ষণে বাড়ির সবাই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়েছে।মেঘ মিসেস মারিয়াকে বললেন আমি যে ক'দিন আছি ওকে আমি পড়াবো। 


হিয়া ভ্রুকুচঁকে তাকিয়ে রইলো মেঘের চলে যাওয়ার দিকে। সেদিনের পর থেকে মেঘ একবারের জন্য কথা বলেনি হিয়ার সাথে। হিয়া বলতে চাইলেও এড়িয়ে গেছে। 

বিষয়টি হিয়ার ইগোতে হার্ট করেছে। মনে মনে ভাবছে যে ছেলে নিজের বোনকে নিয়ে এতো পসেসিভ সে নিজের ওয়াইফের জন্য তো আরো পসেসিভ হবে। 


নীলু মনে মনে বেজায় খুশি। তার অবশ্য কারন আছে সেদিন যখন আরহা জানতে চেয়েছিলো তার বর দেখতে কেমন? এখন সে কোথায়? তখন নীলু বলেছিলো সে রুপকথার দেশে তোর জন্য যাদুর কাটি আনতে গেছে, আর দেখতে একেবারে রাজকুমার। এতোদিনে নীলুর সাথে আরহার ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। 


আরহা নিজের রুমে বসে ভাবছে এই লোক এতো রাগী। সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে শাওন তার হাত ধরেছিলো বলে কি রাগটাই না দেখালো। 

আমি তো কিছুতেই ছোট সাহেবের কাছে পড়বো না। 


এমন এসব নীলু পিছন থেকে এসে বলে, ভালোই হলো বল এখন থেকে রোজ দু'চারটা বেতের বারি পরবে তোর পিঠে 


খুব খুশি তুমি তাই না! 

- হুম অনেকককককক

- শুনো প্রত্যেকটা আঘাতের হিসেব রেখে দেবো পরে আমার বর আসলে প্রতিশোধ নেবো।

নীলু জোড়ে হেসে হেসে বলে হ্যঁরে তুই বরের চেহারা না দেখে বিয়ে করে নিলি! এবার তোর বর যদি তোর নাকের ডগায় ঘুরে বেরায় তাও তো চিনতে পারবি না। 

-আরহা রাগ দেখিয়ে বললো,কে বললো চিনতে পারবো না। মা বলেছিলো নিজের মানুষের গা থেকে আপন আপন গন্ধ পাওয়া যায়। ঠিক সেই গন্ধ শুকে চিনে নেবো। 

- ওরে পাকা বুড়ি। তোর বার্থডে কবে? না মানে ১৩ থেকে ১৪ কবে হবে? 

- এই শুনো কাউকে বলবেনা, আমার বার্থডে তো এই মাসের একুশ তারিখে। 

- সতি বলছিস! 

- আরে মিথ্যে বলবো কেনো? 

- এদিকে আয় তো আরহা! 

- আরহা কাছে আসতেই নীলু আরহারকে বলে তুই তো বড় হয়ে যাচ্ছিস 

- আমি কি সব সময় ছোট থাকবো নাকি?

এরমধ্যেই মেঘ আরহার রুমে আসলো। মেঘকে দেখে নীলু আস্তে করে বের হয়ে গেলো। মেঘ আরহার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, পরিক্ষায় ফেল করে আমাদের বাড়ির নাম ডুবানোর প্লানিং করছো? 


আরহা কি বলবে বুঝতে পারছেনা এই লোককে দেখলেই তার কথা ফুরিয়ে যায়। 


চলবে


আজকের পর্বটা প্রচন্ড খাপছাড়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি গল্পে নতুন মোড় আসতে চলছে। সাথেই থাকুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২