বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ১০
বেপরোয়া_প্রেমঘোর
লেখিকা—প্রিয়া(ছদ্মনাম) Priya's Story
পর্ব ১০
তুলি মেয়েটিকে নিয়ে বাইরে এসেছে আদিবা।মেয়েটিকে একদম নিজের বোনের মতো ভালোবেসে ফেলেছে কয়েক ঘণ্টায়ই।বাাসবে নাই বা কেন!?মেয়েটা খুব মিশুক আর মিষ্টি। এত সুন্দর করে কথা বলে!প্রতিটা কথায় আপা আপা করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।আদিবা আর তুলি এখন একটা চুড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আদিবা তুলিকে বললো,
—'কোন রঙের কিনবো বলতো তুলি?বেগুনি/লাল/নীল নাকি সাদা?'
—'আপা তুমি যেটাই পড়ো না কেন তোমাকে সুন্দর লাগবে।আমি বলি কি!তুমি সব রঙের চুড়িই ১ ডজন করে কেনো!'
—'ঠিক আছে।কিন্তু ২ ডজন করে কিনবো।১ ডজন আমার আর ১ ডজন তোর।তুই একদম না করবি না কিন্তু। এটাই তো এসবের বয়স।এখন সাজগোজ করবি, সুন্দরভাবে ফিটফাট হয়ে থাকবি।দেখবি মনটা ফুড়ফুড়ে লাগবে।'
—'আপা আমি তো মামির বাসায় থাকতে কখনো এসব বিলাসিতার কথা মাথায়ই আনিনি।চুড়ি পড়ার কথা তো ভাবিও নি।আমি বলি কি তুমি শুধু নিজের জন্যই কিনো।আমার এসবে আগ্রহ হয় না গো।'
—'এই..আগ্রহ হয়না মানে কি হ্যাঁ?এই বয়সে চুড়ি পড়বি না তো কি বুড়ি হলে পড়বি?তুই একদম চুপ থাক।আর কোনো কথাই বলিস না।'
আদিবা নিজে পছন্দ করে মোট ৭ রঙের চুড়ি কিনলো।সবগুলোই ২ জোড়া করে।তুলিকে পেয়ে তার মনে যেটুকু ভয় ছিলো তাও গায়েব হয়ে গেছে।ঝরঝরে মেজাজে ঘুরছে আজ।দুজনে মিলে ঝালমুড়ি খেলো।তারপর সবার জন্য কিছু ফ্রুটস কিনে বাসায় ফিরলো সন্ধ্যা হওয়ার একটু আগে।তুলির জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে নিচতলার একটা রুম।বেশ বড়সড় আছে রুমটি।তুলিকে ওর রুমে রেখেই উপরে উঠলো আদিবা।ঘরে গিয়ে আদিকে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে দেখলো সে।আদি তাকে দেখে মৃদু হেসে বললো,
—'তুলি পেয়ে দেখছি আমাকে ভুলেই গেছো!বাহ!আজ সারাদিনেও একবার খোঁজ নিয়ে দেখেছো তোমার সো কল্ড বরটা কেমন আছে?হুমম?'
আদিবা এবার দু হাত বুকে ভাজ করে দাঁড়ালো। ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে বলে উঠলো,
—'আমি নাহয় তুলিকে পেয়ে আপনার খোঁজ নিতে ভুলে গেছি।কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি আপনার পরিবর্তন দেখে!'
—'আমার পরিবর্তন মানে?কি বলতে চাইছো?'
—'বুঝতে পারছেন না?আচ্ছা আমি বলছি।সেদিন তো খুব জোর দিয়ে বলেছিলেন আমাকে সবসময় তুই করে বলবেন।তো হঠাৎ কিছুদিন ধরে তুমি বলার কারণ?'
—'ওহ আচ্ছা এই কথা!আমি কখন বলেছি যে শুধু তুই বলবো।আমি বলেছিলাম আমার যখন যেটা বলতে ইচ্ছে হবে তখন সেটাই বলবো।তাছাড়া ঘরের বউকে তুই করে বললে লোকে মন্দ বলবে। সচরাচর কোনো স্বামীই তো তার বউকে তুই করে বলে না।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে তুমি করেই বলবো।'
—'সবার স্বামী তো রোমান্টিক হয়।আপনি তো একটা আনরোমান্টিক ম্যান!বিয়ের পর থেকে তো আমার কাছে থাকছেনই না।এই কাজ সেই কাজ।সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ।আমাকে নিয়ে কখনো ঘুরতে বের হয়েছেন?এইযে আজ আমি তুলিকে নিয়ে বাইরে গেলাম।কেন?আপনার আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো না?'
—'আমি বাড়িতে আসার আগেই তো তুমি ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেছো।আর বিয়ের পর থেকে একের পর এক অঘটন ঘটছে।এর মধ্যে তোমায় কি করে ঘুরতে নিয়ে যাবো?এজন্য আমায় আনরোমান্টিক বললে?'
—'হ্যাঁ তো ভুল কি বলেছি।আপনি একটা নিরামিষ মানুষ। আপনার নাম মিষ্টি করলা না দিয়ে বোধ হয় তিতা করলা দিলেই ভালো হতো।'
—'তবে রে!আমি নিরামিষ? '
আদি বিছানা থেকে উঠে তেড়ে গেলো আদিবার দিকে। আদিবার দৌড়ে আদিকে ক্রস করে খাটের ওপাশে চলে গেলো। খাট থেকে একটা বালিশ তুলে নিয়ে সে ছুঁড়ে মা'রলো আদির দিকে।আদি আরো রে'গে গেলো।সেও পাল্টা বালিশটা ছুঁড়ে মা'রলো আদিবার দিকে। দৌড়ে আদিবাকে ধরার চেষ্টা করলো।অবশেষে ধরেই ফেললো আদিবার এক হাত।আদিবাকে তার কাছ নিয়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
—'কি বলছিলে তখন আমি আনরোমান্টিক,নিরামিষ? '
—'আ...আমি তো এমনি বলেছিলাম।আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?আপনি অনেক ভালো মানুষ। আমাকে ছেড়ে দিন।আমি একটু তুলির কাছে যাই।মেয়েটা খায়নি এখনো।আপনিও তো খাননি।আমি নিচে যাই। ডিনার এরেঞ্জ করি?'
আদি এবার দুষ্টুমিমাখা হাসি দিলো।আলতো হাতে আদিবার কোমড় জরিয়ে তাকে কাছে নিয়ে আসলো।আদি যেন আর নড়তেই পারলো না।পুরো শরীর অসাড় হয়ে গেলো তার আদির এমন আচরণে।আদি আদিবার কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো।গলার পেছনে হাত নিয়ে তার কপালে কপাল ঠেকালো।আদিবার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। সে যে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মে'রেছে সেটা বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলো।আদি এবার ফিসফিস করে নেশা মেশানো কণ্ঠে বললো,
—'আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিচ্ছু করতে চাই না।আমি চাইলেই এতদিনে আমাদের মধ্যে অনেককিছু হতে পারতো। কিন্তু আমি চাইনা আমার স্পর্শে তুমি কোনো প্রকার অস্বস্তি বোধ করো।আমি চাই তুমি আমাকে ভালোবাসো।নিজে থেকে আমার কাছে আসো।আমাদের মিলন ভালোবাসার মধ্য দিয়ে হোক।কোনো জোরজবরদস্তির মধ্যে নয়।আমি তোমার মনটাকে ভালোবাসি আদিবা। যতদিন তুমি আমাকে ভালো না বাসবে আমি ততদিন তোমার অনুমতির বিরুদ্ধে কিচ্ছু করবো না।আ'ম এগারলি ওয়েটিং ফর দ্যাট ডে হোয়েন ইউ উইল লাভ মি ডিয়ার!'
আদি আদিবার কপালে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে দিলো।কিছুক্ষণ ওকে জরিয়ে ধরেই দাঁড়িয়ে রইলো।তারপর বললো,
—'আমি নিচে যাচ্ছি। তুমিও এসো।ডিনার করে নেবে।তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু। '
আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো আদি।আদিবা সেখানে এখনো শকড্ হয়েই দাঁড়িয়ে আছে।সে আদির প্রতিটা কথা ভাবতে লাগলো।কত সরল সহজ কথাগুলো মানুষটা আবেগ মিশিয়ে বলে গেলো!কতটা প্রাধান্য দেয় আদিবার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে।এমন স্বামী কজনের কপালে জুটে?আদিবার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো। লজ্জারাঙা হয়ে হাসতে হাসতে সে নিচে যেতে উদ্যত হলো।
_______________________
সকাল ৭ টা!
তুলির ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মিনি ইসলাম। তুলির ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে এক পুরুষালি কণ্ঠ। ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। তাই তিনি ভেতরে যেতে পারছেন না।কণ্ঠটায় কেমন আড়ষ্টভাব। মুখে কোনো কাপড় বেঁধে কথা বললে যেমনটা শোনা যায় তেমন।তাই মিনি কণ্ঠটাও চিনতে পারছেন না।কিন্তু কথাগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। পুরুষ কণ্ঠটি বলছে,
—'তোকে কি বলেছিলাম এখানে আসার আগে ভুলে গেছিস তুই?আমার কথা অমান্য করছিস?ভুলে যাসনা তোর মা কিন্তু আমার জিম্মায় আছে।আমার সাথে যদি বিশ্বাসঘাতকতা করিস তাহলে কি হবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস?'
—'স্যার আমাকে মাফ করে দিন স্যার।বিশ্বাস করুন আমায়।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।আমি তো শুধু আবেগের বশে কথাটা বলেছিলাম স্যার।প্লিজ আমায় ভুল বুঝে আমার সাথে এমন করবেন না।আমার মার কোনো ক্ষতি করবেন না স্যার প্লিজ।পায়ে পড়ি আপনার আমায় ক্ষমা করে দিন।আমি কোনো বিশ্বাসঘাতকতা করবো না।কথা দিচ্ছি স্যার!'
কান্নারত কণ্ঠে কথাগুলো বললো তুলি।আবার সেই পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পেলো মিনি।
—'ঠিক আছে।এবারের মতো মাফ করে দিলাম।পরের বার থেকে যেনো তোর মুখে আমি এমন কোনো কথা শুনতে না পাই।আমি যেভাবে বলবো সেভাবে চলবি।আমার কথার বাইরে এক পাও ফেলবি না!'
মিনি অপেক্ষা করছিলো দরজা খুলে লোকটির বেরিয়ে আাসার।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।পাশে থাকা টি টেবিলের উপর রাখা ফুলদানিটি মিনির হাতের নাড়ায় নিচে পড়ে বিকট শব্দ তৈরি করলো।যার ফলে সতর্ক হয়ে গেলো দরজার ওপাশের দুজনই।মিনি হতভম্ব হয়ে গেলো ঘটনায়।এভাবে তীরে এসে তরী ডুবে গেলো?এই তুলি মেয়েটা না জানি কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে এ বাড়িতে। কাকে না যেন ঢুকিয়েছে ঘরে।আরেকটু হলেই ধরা পড়তো দুজনই।কিন্তু মিনি হাল ছাড়লো না।সে দরজায় জোরে জোরে ধা'ক্কা দিতে দিতে বললো,
—'তুলি, এই তুলি।দরজা খোলো বলছি।যাকে নিয়ে ভেতরে আছো তাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসো।তাড়াতাড়ি বের হও তুলি।তোমাদের সব কথা আমি শুনেছি।আর পালিয়ে লাভ নেই।কথাগুলো বলতে বলতেই দরজা খুলে দিলো তুলি।সে বললো,
—'কি হয়েছে মামিমা?আপনি কাকে নিয়ে বেরিয়ে আসার কথা বলছেন?'
মিনি হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে কাউকেই দেখতে পেলো না।সে পুরো ঘর খুঁজেও কাউকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—'তাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছো তুমি যার সাথে একটু আগে কথা বলছিলে?'
—'ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার!আমি তো ফোনে আমার মামার সাথে কথা বলছিলাম মামিমা।লাউডে দেওয়া ছিলো। এজন্য হয়তো আপনি শুনতে পেয়েছেন।'
—'এই মেয়ে?আমাকে কি গাধী মনে হয় তোমার? আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি সব কথা।মনে হচ্ছিল ঘর থেকে কেউ কথা বলছে।আর তুমি বলছো ফোনে?আচ্ছা মানলাম ফোনে।কিন্তু তোমার মা আসলো কোথা থেকে? ওই লোক তোমায় হু'ম'কি দিচ্ছেলো যে তোমার মার ক্ষতি করবে তুমি ওর কথা না শুনলে।এসব তোমার মামা বলবে কেন?তোমার মা এলো কোথা থেকে? '
—'মামিমা আপনি এসব বলছেনটা কি?আপনি তো জানেনই আমার মামা মামি ওতটা ভালো ছিলো না। আসলে বলতে গেলে ভালো ছিলেন না আমার মামা।আমি আজ শুধু বলেছিলাম এ মাসে তো ওনাকে টাকা দিয়েই আমায় এ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই এ মাসের বেতন থেকে আমি অর্ধেক কিছু রেখে দিতে চাই।কিছু দরকার ছিলো।এটা বলতেই মামা ক্ষে'পে উঠলো।আমি আমার মামিকে খুব ভালোবাসি। তাই আমাকে মামির কথা বলে ভয় দেখালো।বুঝতে পেরেছেন মামিমা?'
—'তোমার একটা কথাও কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুলি!'
—'আশ্চর্য!আমি এখন কি করবো?যা সত্যি আমি তাই বলেছি মামিমা। বিশ্বাস করুন!'
—'ঠিক আছে মেনে নিলাম।রান্নাঘরে এসো কিছু কাজ আছে।'
মিনি গোমড়া মুখে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। তুলি বুঝতে পারলো না সে আসলে তার কথাগুলো বিশ্বাস করেছে কিনা।এদিকে মিনিও সেই কথাগুলো মনে মনে আওড়াতে লাগলো।কিছু একটার হিসাব যেন মিলছে না।কোনো গরবর তো আছেই তুলির মধ্যে। কিন্তু কি সেটাই মিনি বুঝতে পারছেন না...!
(রিচেক দিতে পারিনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!)
চলবে...?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন