বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ৮

 বেপরোয়া_প্রেমঘোর 

লেখিকা—প্রিয়া(ছদ্মনাম) Priya's Story 


পর্ব ৮


পাশাপাশি রয়েছে তিনটি রুম।১ম রুমটিতে আবছা নীল বাতি জ্বলছে রুমটিতে।মেঝেতে পড়ে থাকা আধা শুকনো র'ক্তও নীলাভ রঙ ধারণ করেছে।হাত পা বাঁধা প্রাণীগুলো এলোমেলো ভাবে একজন আরেকজনের উপর শুয়ে আছে।শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত।বেশ গভীর ক্ষত। ঠিক পাশের রুমটিতেই জ্বলছে রেড লাইট।রুমে রয়েছে একটি স্ট্রেচার।লা'শ সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ ও চারপাশ ভর্তি শেল্ফে শ' খানিক বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। একটা ফরেন্সিক ল্যাবের মতোই দেখাচ্ছে রুমটিকে। এ রুমে কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ দাঁড়ালে তৎক্ষনাৎ তার মনে হবে সে ভুল করে হয়তো দোযখে চলে এসেছে।কেমন হিমশীতল ঠাণ্ডা রুমের চারদিকে মৃ'ত্যু মৃ'ত্যু হাওয়া। একেবারে শেষের রুমটি থেকে গুনগুন করে কিসের শব্দ যেন ভেসে আসছে....


________________


—'এই তাবিজটা গলায় পড়ে নে আদিবা।আমি এটা কবিরাজের কাছ থেকে নিয়ে এসেছি। আদি তোকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর পরই আমি আর মিনি গিয়েছিলাম কবিরাজের কাছে।তোর ঘটনাগুলো যেটুকু বলতে পেরেছি তা শুনেই উনি এটা দিয়েছেন।বলেছেন ইনশাআল্লাহ আর কোনো সমস্যা হবে না।দেখ মা তোরা আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়ে।এসবে বিশ্বাস করিস না সেটাও আমি জানি।কিন্তু আমি তো জানি এ পৃথিবীতে মানুষের পাশাপাশি অন্য অনেক কিছুও আছে।তোরা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা কর আমার কোনো সমস্যা নেই।তবে আমার অনুরোধ এই তাবিজটা সবসময় নিজের গলায় পড়ে থাকবি।অন্তত আমার অনুরোধটা রাখ মা।আমি জানি এতে তোর ভালো ব্যতীত খারাপ কিছু হবে না।'(রিয়া চৌধুরী) 

—'মা এভাবে বলার কোনো দরকার নেই।আমার সত্যিই এমন কিছুর প্রয়োজন ছিলো খুব করে।ভালো করেছো এটা এনে।আমি খুব ভালো করেই জানি মা আমার সাথে যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ হ্যালুসিনেশন নয়।দেয়ার ইজ সামথিং রং!আমি এটা সবসময় পড়ে থাকবো মা।আদি বললেও খুলবো নাহ।তোমাকে ধন্যবাদ এটা এনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু মা একটা প্রশ্ন ছিলো!'

—'কি প্রশ্ন মা?বল আমায়।'

—'মা নিচে অভি ভাইয়াকে মামা এমন নির্মমভাবে মা'রধর কেন করছিলো?ইস কি অবস্থা করেছে ভাইয়ার!'

—'আমিও সঠিকভাবে জানি না।বাপ ছেলের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়েছে সম্ভবত। এই নিয়েই দুজন দুজনকে গালিগালাজ করেছে। সে থেকেই এই অবস্থা। তুই এসব ভাবিস না।রাত থেকে কিচ্ছু খাসনি।শরীর নিশ্চয়ই একদম দুর্বল হয়ে পড়েছে।দাঁড়া আমি তোকে আদির ঘরে নিয়ে যাই।তুই ওখানে থাক।আমি তোর জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।'

—'না মা।আমি এখন ওই রুমে যাবো না।ওই রুমে গেলেই আমার ভয় করবে মা।প্লিজ আমি তোমার রুমেই থাকি।ওই রুমে গেলেই আমার আবার আগের ঘটানগুলো মনে পড়ে যাবে।'

—'আচ্ছা ঠিক আছে।এত অস্থির হচ্ছিস কেন?আমার ঘরেই থাক তুই।এটা গলায় পড়ে নে।আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। আর একটু অভির অবস্থাও দেখে আসবো।তুই চিন্তা করিস না আমি এক্ষুনি আদিকে এখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি। '

—'ঠিক আছে মা।তুমি যাও।আমি একাই ঠিক আছি।ওনাকে না ডাকলেও চলবে।'

—'বোকা মেয়ে। আমার ডাকা লাগবে না।একটু পর দেখবি ও নিজেই এসে পড়েছে।আমি গেলাম রে।সাবধানে থাক।'


রিয়া চৌধুরী ঘরের দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।আদিবা তার হাতে থাকা তাবিজটি গলায় পড়ে নিলো।নিজের সাথে এখন কেমন তাও একটা ভরসার জিনিস আছে।আল্লাহর কালামকে তুচ্ছ করে নিশ্চয়ই কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে আসতে পারবে না।আদিবা ধীরে ধীরে খাটের উপর গিয়ে বসলো।নিচ থেকে আফজাল হোসেন আর রিয়া চৌধুরীর কণ্ঠ ভেসে আসছে।কিন্তু কি বলছেন তা বোঝা যাচ্ছে না।আদিবা চোখ বুজে হেলান দিয়ে বসে রইলো।শরীরটা সত্যিই অনেক বেশি ক্লান্ত লাগছে।কাল ধা'ক্কাটাও বেশ জোরে হওয়ায় সারা শরীর ব্যথা করছে।একরাশ হতাশা নিয়ে চোখ বুজে রইলো আদিবা। 


রিয়া চৌধুরী নিচে এসে দেখেন আফজাল সোফায় এখনো আগের মতোই বসে আছে। আশেপাশে মিনি বা অভিকে দেখতে পেলেন না তিনি।আদিও নেই।বোধহয় উপরে গেছে।আফজাল যাই বলুক না কেন রিয়া চৌধুরী তো আসল খবর জানেন।এরপর আর আফজাল এর সাথে কথা বলার ইচ্ছে হলো না তার।তিনি আফজালকে এড়িয়েই রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলেন।কিন্তু আফজাল তাকে নিজেই ডাক দেওয়াতে তিনি সাফ জানিয়ে দেন অভি সুস্থ না হওয়া অব্দি তিনি আফজালের সাথে কোনো কথা বলতে আগ্রহী নন।বলেই তিনি চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে।আফজাল অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তার যাওয়ার পানে।তার জীবনে এই মেয়েটাকেই তিনি প্রথম ভালোবেসেছিলেন।পরম স্নেহ-মমতা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন।তার চোখের সামনে বড় হওয়া মেয়েটির এমন আচরণ আরো একবার তার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করলো।চাইলেই তিনি এখন বোনের সাথে বাকবিতণ্ডা করতে পারতেন কিন্তু তাতে রিয়ার মনে তার প্রতি ঘৃণা বাড়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।তাই তিনি চুপ হয়ে বসে রইলেন সোফায়।মিনি হয়তো উপরে অভিকে বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি করছে।এরই মধ্যে সিড়ি দিয়ে নেমে এলো আদি।রান্নাঘরে মাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বললো,

—'মা আদিবাকে একা রেখে তুমি চলে এলে কেন?ওর তো এখন একদমই একা থাকা উচিত নয় মা।তোমাকে কে বলেছে রান্নাঘরে আসতে!আমি বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসতাম!'

—'আরে বাপ চুপ কর তো একটু।মনে হচ্ছে ও তোর একারই বউ। আমার আর কিছুই নয়।শোন এই মেয়েকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি আমি। তুই ওকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসিস?আমি ওকে সেফ করেই রেখে এসেছি।তাও ভেবেছিলাম একটু পর তোকে পাঠিয়ে দেবো ওর কাছে।মেয়েটার শরীরের এই অবস্থায় আমি ওকে বাইরের খাবার খাইয়ে আরো অসুস্থ করতে চাই না।আমি চিকেন স্টু বানাচ্ছি।তুই এটা উপরে নিয়ে যাস একটু পর।এখন যা তো একবার অভির ঘরে। ছেলেটার কি অবস্থা দেখে আয়।আদিবার জন্য চিন্তা করিস না। ও ঠিকই থাকবে।'

—'আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার কথার উপর ভরসা করলাম।অভির ঘরেই যাচ্ছি। দেখে আসি ওর কি অবস্থা। আর রান্না শেষ হলে আমাকে ডাক দিও।আমি নিয়ে যাবো এটা। '

—'ঠিক আছে নিয়ে যাস।'


ধীর পায়ে আদি হেঁটে যেতে চাইলো সিড়ির দিকে।কিন্তু আফজালকে দেখে মনে হলো তার সাথে কিছু কথা বলা দরকার। এমনভাবে অভিকে মা'রা তার একদমই উচিত হয়নি।সে সোফায় আফজালের পাশে গিয়ে বসলো।


এদিকে আদিবার ফোনে গত ৫ মিনিট ধরে কল আসছে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে।অপরিচিত নাম্বার বলে আদিবা কল রিসিভ করছে না।কিন্তু অনবরত বারবার কল আসতে থাকায় সে এবার কলটা রিসিভ করে কানে নিলো।সাথে সাথে অপর পাশ থেকে ভেসে এলো এক মহিলা কণ্ঠ।

—'কেমন আছো আদিবা?আবারও কোনো সমস্যা হয়েছে কি?'


অল্প পরিচিত মনে হলেও সম্পূর্ণভাবে কণ্ঠের মালিককে চিনতে পারলো না আদিবা।তাই সে জিজ্ঞেস করলো,

—'কে বলছেন আপনি?'

—'আমাকে চিনতে পারো নি আদিবা?একটু আগেই তো দেখা হলো।এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?আমি ডক্টর সীমা বলছি!'

—'আন্টি!আন্টি আপনি আমাকে কল করছিলেন এতক্ষণ ধরে!আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন আন্টি?'

—'শোনো মেয়ের কথা। নাম্বার পাওয়া কি একটা ব্যাপার হলো নাকি?তোমার হাসবেন্ড তার নাম্বার দিয়েছিলো আমাকে জরুরি কন্টাক্টের জন্য । তোমার ব্যাপারটা নিয়েই গুগল ঘাটছিলাম।পরে মনে পড়লো তুমি তো বেশ অনেক্ষণ হয়েছে এখান থেকে গিয়েছো।আবার কিছু হলো কিনা একবার জানা প্রয়োজন। আর তোমার ইক্সেক্ট অবস্থা একমাত্র তুমিই ঠিকভাবে বলতে পারবে।তাই মিঃ চৌধুরীকে ফোন করে আমি তোমার নাম্বার নিয়েছি।বাদ দাও।এখন বলো তুমি কেমন আছো?শরীর কেমন লাগছে এখন?'

—'আলহামদুলিল্লাহ আন্টি ভালো আছি। এখানে আসার পর আর তেমন কিছু হয়নি।ভয়টাও এখন একটু কম লাগছে।দোয়া করবেন আন্টি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারি আমি।'

—'অবশ্যই মা।নিশ্চয়ই দোয়া করবো।আমার ঔষধে তবে একটু হলেও কাজ করেছে। তোমার ভয়টাতো কমেছে!ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে যেন আর তোমায় এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় সে ব্যবস্থাও আমি করে দেবো।ভালো থাকো মা।'

—'জি আন্টি।আপনার উপর ভরসা করছি আমি।আপনিও ভালো থাকবেন আন্টি।আল্লাহ হাফেজ।'

—'আল্লাহ হাফেজ।'


ওপাশ থেকে সীমাই লাইন কে'টে দিলেন।আদিবা ফোন হাতে নিয়ে সামান্য হাসলো।কারণ সে আসলে কোনো ঔষধই খায়নি।বলতে গেলে কোনো এক অজানা কারণেই আদিবার এখন আর ভয় করছে না।এই ঝামেলা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে পারলেই তার সম্পূর্ণ স্বস্তি। 


(পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত🙂মা অসুস্থ! 🙂)


চলবে...?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২