বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ৯

 বেপরোয়া_প্রেমঘোর 

লেখিকা—প্রিয়া(ছদ্মনাম) Priya's Story 


পর্ব ৯


ওপাশ থেকে সীমাই লাইন কে'টে দিলেন।আদিবা ফোন হাতে নিয়ে সামান্য হাসলো।কারণ সে আসলে কোনো ঔষধই খায়নি।বলতে গেলে কোনো এক অজানা কারণেই আদিবার এখন আর ভয় করছে না।এই ঝামেলা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে পারলেই তার সম্পূর্ণ স্বস্তি।দরজা খোলার শব্দে সামনে তাকিয়ে আদিকে দেখতে পেলো আদিবা। আদির হাতে একটা স্যুপের বাটি।আদি আদিবার কাছে এসে বাটিটা পাশের টেবিলে রাখলো।তারপর বিছানায় আদিবার পাশে বসে তাকে জিজ্ঞেস করলো,

—'কেমন লাগছে এখন?'

—'আলহামদুলিল্লাহ ভালো।'

—'এখনো ভয় করছে?'

—'না তেমন না।'

—'মা চিকেন স্টু বানিয়ে পাঠিয়েছে। খেয়ে নাও।'

—'আমার এখন খেতে একদম ইচ্ছে করছে না।আমি ঘুমাবো একটু। সারারাত ঘুম হয়নি।'

—'সেটা তো আমিও জানি আদিবা।কিন্তু এই কয়েকদিনে তোমার শরীর থেকে কত ব্লাড লস হয়েছে কোনো আইডিয়া আছে তোমার? সেই ক্ষতিটা পূরণ করতে হলে তোমাকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।র'ক্তশূন্যতায় ভুগবে নাহলে।'

—'আমি ঘুম থেকে উঠে তারপর খাই না প্লিজ!'

—'বাচ্চাদের মতো কথা বলো না আদিবা।তুমি তো ঘুমাবেই।না করেছে কে?কিন্তু এটা খেয়ে ঔষধ খাবে।তারপরই ঘুমাবে।যতক্ষণ ধরে আমার সাথে তর্ক করছো ততক্ষণে কিন্তু তুমি খেয়ে ফেলতে পারতে।'


আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। আদি টেবিল থেকে বাটিটা হাতে নিয়ে চামচে স্যুপ তুললো।দু তিনবার ফু দিলো যাতে আদিবার মুখে গরম না লাগে।তারপর চামচটা আদিবার মুখের সামনে ধরলো।আদিবাও আর দ্বিরুক্তি না করে বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো।স্যুপ খাওয়ানো শেষ করে ডক্টর সীমার দেওয়া ঔষধগুলোও খাইয়ে দিলো আদি। তারপর বললো,

—'নাও এবার যত ইচ্ছে তত ঘুমাও।আর কেও বিরক্ত করবে না। আমি চলে যাচ্ছি। '

—'শুনুন!'

—'কি? '

—'আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন কোনো কারণে?'

—'নাহ তো।আমি কেন তোমার উপর রাগ করবো?'

—'কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে করেছেন।আপনি তো আমার সাথে এভাবে কথা বলেন না।'

আদি দু হাত বুকে ভাজ করে জিজ্ঞেস করলো, 

—'তো কেমন করে কথা বলি?'

—'কি জানি।তবে আপনার কথাগুলো আমার কাছে কেমন ফর্মাল কথাবার্তা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে শুধু দায়িত্বের জেরেই আমার যত্ন নিচ্ছেন। '


মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো আদিবা।আদি ভ্রু কুঁচকালো। অতঃপর ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হাসতে শুরু করলো।হাসতে হাসতে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে গেলো।আদিবা ভেবে পেলো না সে কি এমন বলেছে যার জন্য আদি এত হাসছে?তার অভিমান আরো গাঢ হলো।আদির দিকে তাকাবে না বলেই ঠিক করলো সে।আদি কিছুক্ষণ পর নিজেকে ধাতস্থ করে একদম আদিবার কাছে গিয়ে বসলো।দু হাতে আদিবার মুখ ধরে তার দিকে ঘোরালো।শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

—'সিরিয়াসলি?তোমার এটা মনে হয় যে আমি শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের জন্য তোমার কেয়ার করছি।সো ফানি আদিবা!তুমি কি জানো আমাার লাইফে মা-বাবার পরে যদি আমি কাওকে ভালোবেসে থাকি তবে সেই মানুষটি তুমি?'


আদিবা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। আদি এমনভাবে এই কথাগুলো বলবে সে ভাবতে পারেনি। পরক্ষণেই দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সে।আদি কিছুক্ষণ পর বললো,

—'তোমার ১৪ বছর বয়স থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি আদিবা।বাচ্চা মেয়ের বাচ্চামিতে মারাত্মকভাবে আঁটকে গিয়েছিলাম। তোমার মায়া এত বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।বরং দিনকে দিন তোমার প্রতি ভালোবাসার জন্ম হয়েছে। অনুভূতিরা প্রখর হয়েছে। আর আমি চাইনা কোনোদিন তোমার মায়া কা'টুক।তুমি সকালে আমাকে পর্যন্ত নিজের কাছে ঘেষতে দেও নি।সেজন্য আমার অনেক খারাপ লেগেছিলো।কিন্তু আমার অভিমান না ভাঙিয়ে তুমি নিজেই অভিমান করে বসলে পা'গ'লি!'

—'আপনি তো আমাকে আগে কখনো এসব কথা বলেন নি।'

—'হুম বলিনি।আর বললেই কি তুমি পাত্তা দিতে? বলিনি তার কারণ আমি বিয়ের আগে কোনো হারাম সম্পর্কে জড়াতে চাচ্ছিলাম না।যা হবে বিয়ের পর হবে।সেজন্যই তোমাকে আগে থেকে কিছু বলিনি!'


আদিবা মাথা নিচু করে বসে রইলো।লজ্জা ফুটে উঠলো তার গালে।আদি আর তেমন কিছু বললো না।আদিবার এখন রেস্ট প্রয়োজন। সে আদিবার কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে নিশ্চুপে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।আদিবা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।আদি নিচে গেলো অভিকে নিয়ে হসপিটাল যাওয়ার জন্য। নীচে গিয়ে দেখলো আফজাল মিনি আর অভি একসাথেই বসে আছে।সে তাদের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 

—'সব মিটমাট হয়ে গেছে তাহলে হুম?'

—'কি মিটমাট হবে ভাই?আমি তোদের মানা করছি আমায় কোথাও নিয়ে যেতে হবে না।কোনো ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই।'(অভি)

—'দেখেছিস...দেখেছিস আদি ছেলেটা কত ঘাড়ত্যাড়া? বলে কিনা কোনো ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই! এমনি এমনি ওকে আমি মারি?'(আফজাল)

—'মামা তুমি আর চেঁচিও না।তুমিই তো ছেলেটার এ অবস্থা করেছো।অভিমানে এখন এসব কথা বলছে।এখন তুমি কি আমার সাথে যাবে? '(আদি)

—'হ্যাঁ যেতে তো চাইছি কিন্তু যার জন্য যাবো সেই তো যেতে চাইছে না।'

—'ওর কথা বাদ দাও।ধরো তো ওকে একটু।আমার গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসাই।'

—'দেখ ভাই আমি বলছি তো এসবের কোনো দরকার নেই।'

—'একদম চুপ থাকবি তুই।মামা একটু ধরো ওকে।'

—'হ্যাঁ ধরছি।'

আদি আর আফজাল দুজনে মিলে নিয়ে গেলো অভিকে।মিনি বাড়িতেই রয়ে গেলো।


এদিকে সীমা ভাবছে আদিবার ব্যাপারটা নিয়ে। এরকম তো হওয়ার কথা নয়।কিছু একটা গরবর আছে আদিবার কেসটাতে যেটা সীমা ধরতে পারছেন না।


______________________


রাত তখন ১ টা ৩৫। আদিবার হঠাৎ করেই ঘুম ভে'ঙে গেছে।পাশেই আদি একহাত তার পেটের উপর দিয়ে শুয়ে আছে।আদিবার পানির পিপাসা পেলো।একবার ভাবলো আদিকে ডাকবে। কিন্তু তখনই মনে পড়লো সে দিনে ঘুমালেও আদি অভিকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ায় তার সে সুযোগ মেলেনি।আদির শরীরটাও তো বেশ ক্লান্ত। এখন এত রাতে ঘুম ভা'ঙানো ঠিক হবে না।তাই আদিবা আস্তে ধীরে নিজেই উঠে গেলো।খাট থেকে নেমে টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলো জগে একদমই পানি নেই।এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে তার পানি না খেলেও হচ্ছে না। কিন্তু এখন পানির জন্য তাকে নিচে নামতে হবে ভাবতেই পুরনো ভয়টা আবার জেঁকে বসলো মনে।হাতের জগটা মৃদুভাবে কাঁপতে লাগলো সাথে আদিবা নিজেও।বারকয়েক দম নিয়ে কিছু দোয়া দরূদ পরে বুকে ফু দিলো। মনে সাহস সঞ্চার করে সে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। যথাসম্ভব শব্দ ছাড়া দরজাটা খুললো যাতে আদি জেগে না যায়।ধীরে ধীরে সে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। পুরো ড্রয়িং রুমে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজ করছে।আদিবা বাতি জ্বালাবে কি জ্বালাবে না ভাবলো।পরে ভাবলো বেসিন তো সামনেই।পানি নিয়ে চলে গেলেই হয়।ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না।সে হেঁটে রান্নাঘরের পাশে থাকা বেসিনের কাছে গেলো।জগ ভর্তি করলো পানি নিয়ে।এখন পর্যন্ত কিছু ঘটেনি দেখে আদিবা কিছুটা স্বস্তি পেলো।সে পুনরায় উপরে উঠে গেলো।আদিবার রুমের পাশেই আদির বাবার রুম।মাঝে বেশ অনেকটা ফাঁকা। তারপর আদির মার রুম।উত্তর দিকে কিছুটা ভেতরে গিয়ে একটা ফ্ল্যাট। এটা মূলত মেহমানদের জন্যই।সেখানেই এক রুমে মিনি আফজাল ও অন্য রুমে অভি থাকে।আদিবা সেদিক থেকে কিছু ভা'ঙার আওয়াজ পেয়ে কেঁপে উঠলো। নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে ভাবলো এত রাতে তারা জেগে আছে কেন?পরক্ষণেই মৃদু চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলো সে।ঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো কৌতুহলবশত।এভাবে কারো ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শোনা ঠিক নয় জানলেও সে নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না।ভেতর থেকে মিনি আর আফজালের গলা ভেসে আসছে।কোনো কিছু নিয়ে এক প্রকার কথা কা'টাকা'টিই হচ্ছে । কিন্তু তারা ঠিক কি বলছে তা দরজার এপাশ থেকে বোঝা গেলো না।আদিবা ভাবলো স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া শোনা একদমই উচিত হবে না।তাই সে চলে গেলো নিজের ঘরে।


___________________


সকালবেলা...


নিচে সোফায় তুলি নামের মেয়েটির সাথে বসে আছে আদিবা।তুলিকে তার সম্পর্কে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।রান্নাঘরে আছেন রিয়া ও মিনি।ওসমান সাহেব একপাশে হুইল চেয়ারে বসে চা পান করছেন।অভি এখনো উপরে। আফজাল হোসেন আদির সাথে তুলিকে নিয়ে কথা বলছেন।তুলিকে তিনিই নিয়ে এসেছেন এখানে। আদিবা যেহেতু এখন অসুস্থ আর রিয়াও প্রায় অসুস্থ থাকে তাই একজন সার্বক্ষণিক সহকারী সবারই দরকার। আদিও অফিসে চলে গেলে আদিবা একা হয়ে যাবে।সেই চিন্তা করেই তিনি তুলিকে নিয়ে এসেছেন যাতে আদিবা তার সাথে সময় কাটাতে পারে। তুলি মেয়েটাও দেখতে ভারি মিষ্টি। বয়স ১৫-১৬ এর মাঝামাঝি হবে।বাবা -মা নেই মেয়েটার।মামার বাড়িতে অনেক অত্যাচার সহ্য করে থাকতো আর মানুষের বাসায় কাজ করতো।আফজাল ওর মামা মামিকে কিছু টাকা দিয়ে এসেছে।আর বলেছে ওই বাড়ি থেকে তাদের প্রতি মাসেই টাকা দেওয়া হবে।টাকাটা মূলত দেবে আদিই। আর তুলি সবসময় এ বাড়িতে থাকবে। আদিবা তুলিকে বললো,

—'তুলি চলো।তোমাকে আমার রুমটা দেখিয়ে নিয়ে আসি।'

—'চলো আপা।'

আদিবা তুলিকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে খাটে বসতে বললো।তারপর নিজে ওয়াশরুমে চলে গেলো মুখ ধুতে।কেমন ঘেমে গেছে নিচে থেকে। আদিবা বের হয়ে আবার তুলির সাথে গল্প করতে লাগলো। মেয়েটাকে তার বেশ ভালো লেগেছে।


_______________


ব্যথায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে এক আগুনের কুণ্ডলীর মাঝে।চারপাশে আগুন আর মাঝখানে সে।সামনেই যেন বসে আছে তার মৃ'ত্যুদূত।যে মেয়েটির মৃ'ত্যুকেই যেন আহ্বান করছে। কিছুক্ষণ পর বাতাস ভারি হয়ে গেলো রুমটির।মেয়েটির উলঙ্গ শরীরের ক্ষতস্থানগুলো আগুনের আঁচে আরো জ্বলতে শুরু করলো। মুখ বাঁধা থাকায় কোনো শব্দও করতে পারছে না বেচারি। এদিকে ভারি বাতাসে গুনগুন শব্দগুলো আরো জোরে উচ্চারিত হতে লাগলো।অস্বাভাবিক দ্রুত উচ্চারিত হলো।রুমের মধ্যে গরম আবহাওয়াটা আরো গরম হয়ে গেলো।মেয়েটির মনে হলো তার পেছনে যেন একটা আগুনের অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে।মুহূর্তেই তাপ আরো কাছে অনুভব করলো সে।কানের কাছে পেলো গড়গড় আওয়াজ। বুঝে গেলো সে তার সময় যে শেষ।শেষবারের মতো মনে মনে কালিমা উচ্চারণ করতে না করতেই মেয়েটির ঘাড় থেকে মাথাটা কে'টে ছিটকে পড়লো ঘরের কোণে।র'ক্তবন্যা বয়ে গেলো ঘরে।সামনে থাকা ব্যক্তি ভয়ংকর স্বরে হো হো করে ঘর কাঁপিয়ে হাসলো.....।


চলবে...?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২