তুমি আসবে বলে পার্ট ১০

 

তুমি আসবে বলে 


নুসাইবা ইভানা 


পর্ব -১০


সেদিনের পর থেকে আরহাকে পড়ানোর দায়িত্ব মেঘের, মেঘের মনে আরহাকে নিয়ে যে অভিমানের মেঘ জমেছিল তাও কেটে যাচ্ছে আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক চলছে সন্ধ্যে বেলা মেঘ আরহার রুমে আসলো আরহাকে পড়াতে মেঘকে দেখলেই আরহার ভিষণ ভয় হয়। এই তো সেদিন একটু ভুল হয়েছিলো ম্যথে তাই বলে এক ঘন্টা বাগান পরিস্কার করিয়েছে কি বজ্জাত। মেঘ আরহাকে অন্যমনষ্ক দেখে বলে, এসব ভাবনা আমার চলো যাওয়ার পর ভেবে নিও। এখন পড়তে বসো। যা পড়া দিয়েছিলাম কম্পিলিট করেছো? 

-জ্বি

- ফাইনাল এক্সামের আর কতদিন বাকি আছে?

- দু'মাস নয়দিন 

-বোর্ড এক্সাম যেভাবেই হোক রেজাল্ট ভালো হতেই হবে। 

এর মধ্যে নীলু চলে আসলো নীলুও মেঘের কাছে পড়ে আরহার সাথে। 

পড়া শেষ হতেই নীলু চলে গেলো। 

আরহা একি ভাবে বসে আছে একটুও নড়ছে না নিজের দু'হাত পেটে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে। অপেক্ষায় আছে কখন মেঘ এ রুম থেকে বের হবে। 

মেঘ আরহার দিকে খেয়াল করলো চেহারায় কেমন খিঁচে রেখেছে চোখ টলমল করছে, মনে হচ্ছে এখুনি বৃষ্টি নামবে। মেঘ খানিক সময় আরহার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। উঠে চলে যাবে এমন সময় আরহাকে বললো,আমাকে এক গ্লাস পানি দাওতো! 

আরহার যেনো শুনতেই পেলো না মেঘ কি বলেছে। একি ভাবে বসে আছে। মেঘ আবার বললো, বললাম তো পানি খাবো নিয়ে এসো। 

আরহা মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে এমনিতেই এই অসহ্য যন্ত্রণা তারপর এই লোকের বিরক্ত কর কথা। 

মেঘ রেগে বললো, এই উঠো তুমি, উঠে দাঁড়াও। আর না হয় বলো কি সমস্যা তোমার? 

- নিচু স্বরে বললো, আপনাকে বলা যাবেনা৷ আপনি চলে যান। 

- কি এমন কথা আমাকে বলা যাবে না বলতেই হবে বলো। 

আরহা এবার কেঁদেই দিলো, কেনো জোড় করছেন বললাম তো বলা যাবেনা। 

- আমাকে বলো কেউ তোমাকে কিছু বলেছে, স্কুলে কারো সাথে ঝগড়া হয়েছে? 

আরহা তো নিজেই বুঝতে পারছে না তার কি হয়েছে! সেদিন নীলু বলেছিলো তেরো থেকে পনেরো বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের প্রতি মাসে কিছু হয়। আর সেটাকে পিরিয়ড বলে। তখন পেটে যন্ত্রণাও হয়। আরহা বুঝতে পারছে না সেটাই হলো নাকি অন্য কিছু? 

আরহাকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ উঠে এসে আরহাকে এক টানে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে, বললাম তো বলো কে তোমাকে কি বলেছে!

আরহার উত্তর দেয়ার পূর্বেই মেঘের চোখ গেলো চেয়ারে লেগে থাকা রক্তের দিকে, মেঘ আরহাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে, এটা কি তোমার প্রথম বার, মানে এর আগে এরকম হয়েছে তোমার!

আরহা মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। মেঘ নিজের ফোন বের করে একটা ভিডিও প্লে করে আরহার হাতে দিয়ে বল, তুমি এই ভিডিও দেখতে থাকো আমি আসছি। আর হ্যঁ আমি না অব্দি এখানেই বসে থাকবে একটুও নড়বে না। আমি যাবো আর আসবো। 

ভিডিও দেখে আরহা বুঝতে পারলো তার কি হয়েছে, এখন ভিষণ লজ্জা পাচ্ছে ছি ছোট সাহেবের সামনে এসব হতে হলো!  

এর মধ্যে মেঘ প্রয়োজনীয় জিনিসটা নিয়ে এসেছে। মেঘে আরহার হাতে প্যকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আর কিছু খেয়ে এই ঔষধটা খেয়ে নিও তাহলে কষ্ট কম হবে। আর শুনো চেয়ার টা পানি দিয়ে পরিস্কার করে রেখো। 

মেঘ চলে যেতেই আরহা ছুটে যায় ওয়াশরুমের দিকে। 


রুমে এসে মেঘ ভাবছে একটা বাচ্চাকে পেলেপুষে বড় করে বউ হওয়ার উপযোগী করে তুলতে হবে। তবে বাচ্চাটা কিউট আছে। "আই লাইক ইট।


এভাবেই ছোট ছোট কেয়ার আর শাসনে চলছিলো আরহা আর মেঘের জীবন। ইদানীং তো বলতে গেলে মেঘ আরহাকে চোখে হারায়। আরহার প্রতি তার এতো কেয়ার দেখে। মিসের মারিয়া আর মোর্শেদ আফরোজ ভিষণ খুশি।

তবে সত্যিটা জানার পর থেকে হিয়া মেনে নিতে পারছে না। হিয়া সহ্য করতেই পারছেনা আরহাকে। 

যদিও আরহা মেঘের ওয়াইফ এই কথাটা মেঘ নিজেই বলছে হিয়াকে। তবে এটাও বলেছে এই কথা আরহা এখনো জানেনা তার হ্যাসবেন্ড কে? 


আরহার প্রতি সকলের ভালোবাসা সকলের কেয়ার দেখে হিংসে হয় হিয়ার। সে যে মেঘের পরিবার আর মেঘকে নিজের করে নিতে চাইছে! ইদানীং ইমতিহানকে ইগনোর করছে কথায় কথায় ঝগড়া হচ্ছে।


একদিন দুপুরে সবাই যখন খাবার খাচ্ছিলো ঠিক সেই মূহুর্তে মিসেস মারিয়া বলেন, মেঘ চলো আমরা সবাই কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি!  

মেঘ বললো যাওযায়। আর তাছাড়া সামনের সপ্তাহে আমার ফ্লাইট আমাকেও চলে যেতে হবে। তবে এবার গেলে সব ব্যবস্থা করে একে বারে ফিরে আসবো।  


ঠিক আছে তবে আজ বিকেলেই রওনা হবো। তোমরা সবাই নিজেদের প্যকিং করে নিও। 


আরহা তো ভিষন খুশি জীবনে প্রথম কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। যদিও মাঝে মাঝে নিজের বরের কথা ভেবে মন খারপ হয়। তবে এটা ভেবে নিজেকে শান্তনা দেয় তার বর অনেক শিক্ষিত হয়ে ফিরে আসবে।ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে! যদিও এসব কথা আরহাকে মিসেস মারিয়া বলেছে। 

আরহা প্যকিং করছে এমন সময় মেঘ আরহার রুমে আসে। 

মেঘ কে দেখে আরহা বলে কিছু বলবেন ছোট সাহেব!

- না তবে আগামীকাল তোমার জন্য সারপ্রাইজ রয়েছে। 

- কি সারপ্রাইজ বলুন না।

- আগামীকাল নিজের চোখেই দেখে নিও। 

আরহার রাগ হলো পুরো কথা না বলেই চলে গেলো বজ্জাত লোক!  


মেঘ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আরহার কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো। আর মনে মনে বলছে কাল তুমি তোমার বরকে দেখতে পাবে। আমি তিন বছরের জন্য চলে যাচ্ছি তাই তোমাকে সত্যিটা বলে যেতে চাই। তৈরী থেকো বোকা বউ। 


হিয়া নিজের রুমে বসে ভাবছে আমি এটা হতে দিতে পারি না কিছুতেই না যে ভাবেই হোক এদের আলাদা করতেই হবে। হিয়া কিচেনে আসলো কেউ তখন আশে পাশে নেই সবাই প্যকিং করতে ব্যস্ত।হিয়া গ্যসের পাইপটা লিক করে দিয়ে চলে আসলো। যদিও তার উদ্দেশ্য ছিলো শুধু আরহাকে কষ্ট দেয়ার কিন্তু ঘটলো ভিন্ন ঘটনা। 


আরহা প্যকিং শেষ করে নিচে আসলো পানি নিতে রুমের জগে পানি ফুরিয়ে গেছে তাই। আরহা পানি নিয়ে কিচেন থেকে বের হচ্ছে তখন মেঘে নিচে নামছে মেঘ আরহার দিকে একবার ফিরে তাকালো। আরহা উপরে উঠছে এমন সময় মেঘ বলে একটু রেডি হয়ে নিচে আসো তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো। চিন্তা করো না সাথে নীলুও যাবে তোমরা আসো আমি ওয়েট করছি। 


আরহা আর নীলু বের হয়ার সময় হিয়াও তাদের সাথে যুক্ত হলো। নীলু হিয়াকে দু'চোখে সহ্য করতে পারে না। 

মেঘ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো আরহাকে দেখেই গাড়ির সামনের দরজা খুলে দিলো। এটা ছিলো আরহার প্রতি মেঘের প্রথম ভালোবাসা প্রকাশ মেঘ চাইছিলো আরহা সামনে এসে বসুক ঠিক সে সময় হিয়া সামনে বসতে নিলে মেঘ আস্তে করে হিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে এখানে আরহা বসবে। হিয়া চুপচাপ পিছনে যেয়ে বসে, নীলুও যাওয়ার আগে আরহার কানে মুখে বলে যায তুই সামনে বস। না হলে মনে হবে ছোট সাহেব আমাদের ড্রাইভার। আরহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো পিছনের সিটে। 

আরহা মুখ ফুলিয়ে বসে পরলো মেঘের পাশের সিটে 

মেঘ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে কি হতো যদি তোমার বযস আর দু'বছর বেশী হতো। তাহলে জমিয়ে প্রেম করা যেতো। এই যে তিন বছরের জন্য চলে যাচ্ছি অথচ তোমাকে একবার জড়িয়েও ধরতে পারবো না। আর না পারবো একটু মন খুলে কথা বলতে। 


শপিং শেষ রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে কিছু খেয়ে নিলো। যদিও মেঘ চাইছে আরহার সাথে কিছু স্মৃতি তৈরি করতে। কিন্তু রাতে যেহেতু তাদের বের হতে হবে তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরলো। মেঘ চোরা চোখে আরহার দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে কবে তুমি আমার পূর্ণ বউ হবে বোকা পাখি! ইশ কত বছর অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে আমাকে ভুলে যাবে না তো বোকা পাখি? 

আরহা মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করুন বাসায় যেতে হবে তো! আমাকে তো পরেও বকতে পারবেন! 

মেঘ বোকা বনে গেলো এখানে বকা আসলো কোথা থেকে? মুচকি হেসে বলে সারাদিন বকার কাজ করলে তো বকা খেতেই হবে। আর কথা না বারিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো। তবে কে জানতো তাদের এই সুন্দর মূহুর্ত কিছু সময়ের জন্য। তারপর তাদের জীবনে এমন ঝড় বয়ে যাবে। দুটি মানুষের জীবন তখন একেবারে ভিন্ন পথে মোড় নেবে। 

কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য সে বিষয়ে কেউ অবগত নয়। 


ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 

আর অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য আশা করছি। 

হ্যাপি রিডিং 🥰

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তুমি আসবে বলে পার্ট ১৩

আমার তোমার তোমাদের গল্প পার্ট ১

বেপরোয়া প্রেমঘোর পার্ট ২